আন্তর্জাতিক রিপোর্ট :পেসার শ্যানন গাব্রিয়েলের বোলিং নৈপুণ্যে দ্বিতীয় টেস্টে জয়ী হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে সমতা এনেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের ছুঁড়ে দেয়া ১৮৮ রানের টার্গেট র্স্পশ করতে গিয়ে গাব্রিয়েলের বোলিং তোপে মাত্র ৮১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ফলে মিসবাহ উল হকের দলকে ১০৬ রানের অবিশ্বাস্য হার মেনে নিতে হয়েছে। এই জয়ে তিন টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতা অনালো ক্যারিবীয়রা। বারবাডোজে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ ওভারে ১১ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরাও গাব্রিয়েল। প্রথম ইনিংসে ৮১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ৯ উইকেটে ২৬৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এসময় ক্যারিবীয়দের লিড ছিলো ১৮৩ রান। পঞ্চম দিনের শুরুতে বাকী ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪ রান যোগ করতে পারে স্বাগতিকরা। প্রতিপক্ষের শেষ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুড়লে পাকিস্তানী লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহর বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ৯৪ রানে ৭ উইকেট ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য ১৮৮ রানের টার্গেট দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টার্গেটে খেলতে নেমে দলীয় ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। ১০ রান করা আজহারকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাতটা এনেছিলেন গাব্রিয়েলই।
গ্যাব্রিয়েলের সাথে পাল্লা দিয়ে উইকেট শিকারে মনোযোগি হন অন্য দুই পেসার আলজারি জোসেফ ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তিন নম্বরে বাবর আজমকে জোসেফ ও অভিজ্ঞ ইউনিস খানকে ৫ রানে থামিয়ে দেন হোল্ডার। উইকেটশিকারে সতীর্থদের আগ্রহ দেখে আরও জ্বলে উঠেন গ্যাব্রিয়েল। তাই তিন বলের ব্যবধানে পাকিস্তানের মেরুদন্ডই ভেঙ্গে তিনি। পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক ও আসাদ শফিককে শুন্য রানে ফিরিয়ে দেন গাব্রিয়েল। এ সময় ৫ উইকেটে ৩০ রানে পরিণত হয় পাকিস্তান। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া পাকিস্তানকে আবারো জোড়া ধাক্কা দেন জোসেফ ও হোল্ডার। ওপেনার হিসেবে প্রায় ২ ঘন্টা ক্রিজে থাকা শেহজাদকে ব্যক্তিগত ১৪ রানে থামিয়ে দেন জোসেফ। ২২তম ওভারে দলীয় ৩৫ রানে শেহজাদের আউটের পর, ২৩তম ওভারে দলীয় ৩৬ রানে আট নম্বর ব্যাটসম্যান শাহদাব খানকে থামান হোল্ডার। ১ রান করেন শাহদাব।
৩৬ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর, পাকিস্তানের গুটিয়ে যাওয়া ছিলো সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেটি হতে দেননি উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদ ও মোহাম্মদ আমির। অস্টম উইকেটে শক্তহাতে হাল ধরেন তারা। তাতে রানের চাকা সচল হয় পাকিস্তানের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের পাল্টা আক্রমনের ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন সরফরাজ-আমির।
এই জুটি ভাঙ্গার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন পেসার গাব্রিয়েল-জোসেফ-হোল্ডার। তারপরও আক্রমনে নিজেদেরকেই রেখেছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোল্ডার। এমন পীচে যেখানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ইয়াসির। সেখানে পেস আক্রমন দিয়ে পাকিস্তানকে গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সড়ে আসেননি হোল্ডার। শেষ পর্যন্ত হোল্ডারের বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনাই কাজে দিয়েছে।
সরফরাজ-আমিরের জুটি ৪২ রানেই থামিয়ে দেন গাব্রিয়েল। ৪টি চারে ৩৪ বলে ২০ রান করেন আমির। দলীয় ৭৮ রানে ফিরেন আমির। এর ৩ রান পর ইয়াসিরকে নিজের পঞ্চম শিকার বানান গাব্রিয়েল। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত পঞ্চম বা ততোধিক উইকেট নিলেন তিনি। এরপর ৩৫তম ওভারের চতুর্থ বলে পাকিস্তান ইনিংসের সমাপ্তি টানেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হোল্ডার। লড়াইয়ের আভাস দেয়া সরফরাজ ২৩ রানে আউট হন। আর পাকিস্তানের ইনিংসে থামে ৮১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বনি¤œ দলীয় স্কোর। এই ইনিংসে পাকিস্তানের দশটি উইকেটই নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। গেল ছয় বছরে প্রথমবারের মত দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষের দশ উইকেটই নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। সর্বশেষ ২০১১ সালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন কীর্তি গড়েছিলো ক্যারিবীয়রা। আর গেল ১০ বছরের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটের পঞ্চম দিনে প্রতিপক্ষের সবক’টি উইকেট নেয়া পেসার হলেন গাব্রিয়েল, জোসেফ ও হোল্ডার। সংক্ষিপ্ত স্কোর :ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৩১২ ও ২৬৮, ১০২.৫ ওভার (হোপ ৯০, ব্রার্থওয়েট ৪৩, ইয়াসির ৭/৯৪)।পাকিস্তান : ৩৯৩ ও ৮১, ৩৪.৪ ওভার (সরফরাজ ২৩, আমির ২০, গ্যাব্রিয়েল ৫/১১)। ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৬ রানে জয়ী। সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।ম্যাচ সেরা : শ্যানন গাব্রিয়েল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে