ডেস্ক রিপোর্টঃ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি কেবল কাটা পড়ায় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি এখন ধীর এবং তা আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়েছে।ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইন্টারনেট গেইটওয়ে ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধীরগতিতে সমস্যা তেমন প্রকট না হলেও এ সময় মানসম্মত কোয়ালিটিটা থাকবে না।” উপমহাদেশে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ ৫টি কেবলের মধ্যে তিনটি অকেজো হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে, বলেন এই তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। আইএসপিএবি জানায়, বাংলাদেশে আইটিসি ব্যান্ডউইডথ সরবরাহকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা কমিউনিকেশন্স ও ভারতী এয়ারটেলের কেবল কাটা পড়েছে।
বাংলাদেশের দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এই ৪০০ জিবিপিএসের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস বিএসসিসিএলের মাধ্যমে আসে। ২৮০ জিবিপিএস আইটিসি ব্যান্ডউইডথ, যা ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আইএসপিএবি জানায়, মোট ব্যান্ডউইডথের ৭৫ শতাংশের বেশি ইন্টারনেট সাবমেরিন কেবলের বিকল্প আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) থেকে আসে।
‘১২১’ নামে একটি সাবমেরিন টেলিকমিউনিকেশন কেবলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারত যুক্ত। এ কেবলের মালিকানায় রয়েছে ভারতী এয়ারটেল। চেন্নাইয়ের সমুদ্রতীর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কাটা পড়ায় গত ১৩ ডিসেম্বর রাত ২টা থেকে কেবলটি অকেজো হয়ে আছে বলে আইএসপিএবি জানায়।
টাকা ইনডিকম কেবল নামে আরও একটি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারত সংযুক্ত, যা টাটা ইনডিকম ইন্ডিয়া-সিঙ্গাপুর কেবল সিস্টেম (টিআইআইএসসিএস TIISCS) নামেও পরিচিত। এ কেবলটি ভারতের চেন্নাই ও সিঙ্গাপুরের চাঙ্গির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। গত বুধবার রাত ১টা থেকে এ কেবলটিও অকেজো হয়ে পড়ে।
এছাড়া ইন্ডিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ (আইএমইডব্লউই IMEWE) আরেকটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে ভারত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত। এই কেবলটিও এখন অকেজো রয়েছে। এই সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ধীরগতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানায় আইএসপিএবি।
আগামী ২০ জানুয়ারির (শুক্রবার) মধ্যে ইন্টারনেটের এ ধীরগতি ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছে সেবাদাতারা; যদিও আইটিসি কেবল মেরামতের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতির কোনো খবর জানানো হয়নি।
বাংলাদেশের ছয়টি আইটিসি অপারেটর প্রায় চার বছর ধরে প্রতিবেশী ভারত থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে দেশে সরবরাহ করছে।
২০১২ সালের আগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযোগের জন্য একটি মাত্র সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভর করত। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে আইটিসি অপারেটরগুলোর কাজ বাংলাদেশে শুরু হয়।
আইটিসি অপারেটররা টেরেস্ট্রিয়াল অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে সাবমেরিন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় তারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে পারে।
২০১২ সালে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এই ছয় অপারেটর হল নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া-এএইচএলজেভি, বিডি লিংক কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড।
আগামী ডিসেম্বরে একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-ইউ-৫ নামের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ পাবে বলে আশা করছে সরকার।
বি/ডি/এন