ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই লকডাউন তুলে নিয়েছে বা শিথিল করেছে। ফলে সোমবার থেকে কিছুটা আগের জীবন-যাত্রায় ফিরতে শুরু করেছে ইউরোপের কয়েক লাখ মানুষ।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার প্রকোপ ধরা পড়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।

করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে ইউরোপ আমেরিকা। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে স্পেন, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় ডেকে এনেছে করোনা। এই ভাইরাসের কারণে এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। এদিকে, করোনার প্রকোপ পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও অর্থনীতি পুণরায় সচল করতে ইউরোপের দেশগুলো তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে শুরু করেছে। তবে জীবন-যাত্রা আগের মতো স্বাভাবিক হতে এখনও অনেকটা সময় লেগে যাবে।

ইতালিতে সোমবার থেকে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই ৪০ লাখের বেশি মানুষ কাজে ফিরেছে। বেশ কিছু গণপরিবহন সেবা দেওয়া শুরু করেছে এবং অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পুণরায় খুলে দেওয়া হচ্ছে।

ইতালির নাগরিকরা এখন আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত লোকজনের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে। তবে তারা একই এলাকার মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারবে, দূরের কোথাও ভ্রমণে এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি।

হাঁটাহাটি ও দৌড়ানোর জন্য পার্কগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে খেলাধুলার জন্য লোকজন বাড়ি থেকে দূরে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছে।

তবে এখনও পর্যন্ত জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকছেই। এছাড়া গণপরিহন বা অনেক মানুষ চলাচল করে এমন স্থানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শেষকৃত্য আয়োজনে কিছুটা কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। ১৫ জনের মতো একটি শেষকৃত্যু অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে এখনই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী গিসেপে কন্তে ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে দেশজুড়ে কড়াকড়ি শিথিলের ঘোষণা দেন। টেক্সটাইল ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পুণরায় কাজ শুরু করলেও অনেক অপ্রয়োজনীয় স্টোর এখনও বন্ধই আছে। সোমবার থেকে বার এবং রেস্টুরেন্টও চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

europe

এদিকে জার্মানিতে গত কয়েক সপ্তাহ পর সোমবার বিভিন্ন সেলুন খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্রেতারা দোকানগুলোতে ভিড় করতে পারবেন না। তাদের আগে থেকেই সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হবে। হ্যামবার্গের একটি সেলুন জানিয়েছে, তাদের সেলুনে ক্রেতার ভিড় লেগে গেছে। অপরদিকে, বার্লিনের একটি সেলুন জানিয়েছে, আগামী তিন সপ্তাহের জন্য ক্রেতারা বুকিং দিয়ে রেখেছে।

গ্রিসেও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে মানুষ। সোমবার থেকে ছোট ছোট দোকান, সেলুন, ফুলের দোকান, বইয়ের দোকান পুণরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় ইতোমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হয়েছে গ্রিস। এই গ্রীষ্মে তারা আবারও পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে।

এদিকে, এখনও কড়াকড়ি শিথিল করেনি যুক্তরাজ্য। তবে তারা কাজে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বিভিন্ন স্থানে স্ক্রিনিং নিশ্চিত করা হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও জীবন-যাত্রা এখনই একেবারে স্বাভাবিক হচ্ছে না ইউরোপে। প্রাণঘাতী করোনা একেবারে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শ মেনেই চলতে হবে। বিশেষ করে জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে নতুন করে আবারও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে