ডেস্ক রিপোর্টঃ কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। পাড়া-মহল্লার মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালনাকারী কমিটির লোকজন থেকে শুরু করে কোরবানি দাতা—কেউই  ন্যায্যমূল্য দেওয়ার মতো চামড়ার ক্রেতা পাচ্ছেন না। ‘চামড়ার চাহিদা নেই’ বলে ন্যায্যমূল্য দিতে রাজি হচ্ছেন না ট্যানারি ব্যবসায়ীরাও। অভিযোগ উঠেছে তারা কম মূল্যে কেনার উদ্দেশ্যে একটি চক্র দলবেঁধে মাঠে নেমেছে। কিন্তু কোরবানিদাতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চামড়া সংগ্রহকারীরা ন্যায্যমূল্য না পেলে বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। তাই রাস্তার মোড়ে-মোড়ে ছোট-বড় চামড়ার স্তূপ পড়ে আছে, বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, সময়মতো এসব চামড়ায় লবণ দিতে  না পারলে বা বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

তবে কেউ কেউ নিজের কোরবানির পশুর চামড়া অল্পমূল্যেই বিক্রি করে দিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে। এই প্রসঙ্গে বাংলামোটর এলাকার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৭৮ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া বিক্রি করলাম মাত্র সাড়ে ৪শ টাকায়। উপায় নেই। বেশি সময় রাখলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অল্পমূল্যেই বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।’

এদিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের বাসিন্দা বরকত আলী কোরবানির উদ্দেশ্যে গরু কিনেছেন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। শনিবার সকালে গরু কোরবানিও দিয়েছেন। মহল্লায় চামড়া কিনতে যারা এসেছেন, তারা এই চামড়ার মূল্য বলেছেন মাত্র ৩০০ টাকা। উপায় না দেখে তিনি এই চামড়া দান করেছেন ঝিল মসজিদ নুরানি মাদ্রাসায়। এভাবেই শুধু বরকত আলী নয়, একই মহল্লায় মোবারক ভূইয়া, আহসান হাবীব রুবেল ঝিল মসজিদে দান করলেও মাদারটেকের নুরুল ইসলাম, শেওড়াপাড়ার নজরুল ইসলাম ও মিরপুরের জাকির হোসেন হাবীব তার গরুর চামড়া নিজ নিজ এলাকার মাদ্রাসা ও মসজিদে দান করে দিয়েছেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, একটি সিন্ডিকেট ছলচাতুরিতে কমমূল্যে চামড়া কেনার চক্রান্ত করছে। গত বছর এক কোটি পিস চামড়া কিনলেও এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সোয়া কোটি পিস পশুর চামড়া কিনবে বলে নির্ধারণ করছেন। কিন্তু বেমালুম চেপে যাচ্ছেন সেই বিষয়টি। উল্টো বলছেন, গত বছরের চামড়ার ৫০ শতাংশ রয়ে গেছে। নতুন করে চামড়া কেনার আগ্রহ নেই। এ সব বলে বলেই তারা সরকারের কাছ থেকে গত বছরের দরেই চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। গতবছর প্রতি ফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা ও খাসির চমড়া সারা দেশেই ২২ টাকা দরে কিনেছেন। এবারও তারা একই দর চূড়ান্ত করে নিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। পাশাপাশি শর্ত দিয়ে রেখেছেন, চামড়ায় লবণ মাখানো হতে হবে। ঢাকার বাইরে এই চামড়ার দর হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। লবণ মাখানো প্রতিফুট খাসির চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ২২ টাকা। এভাবেই দেশের চামড়া খাত এখন পুরোপুরি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদের আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গরু ও খাসির চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও একটি মহল তা মানেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর এখন বেশি হলেও বাংলাদেশে কম। চামড়া ভালো দরে বিক্রি করতে ব্যর্থ হলে তা ভারতীয় মাড়োয়ারিদের কাছে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজার ও বিক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। সরকারের উচিত হবে ব্যক্তিপর্যায়ে চামড়া কেনার অনুমতি না দেওয়া।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের চামড়ার বাজার চার হাজার কোটি টাকার। এই কোরবানির ঈদে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে। স্থানীয় বাজারে চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে। এ কারণে এখন দেশেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ স্থানীয় চামড়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প। দেশের চামড়া ব্যবসায় ঢাকার পোস্তার পরেই নাটোরের অবস্থান। দেশে সারা বছর যে চামড়া আসে, তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় শুধু কোরবানির ঈদ থেকে। সারা বছরের জন্য সোয়া কোটি পিস চামড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও কোরবানির ঈদেই পাওয়া যায় ৬০ লাখ পিস চামড়া। সারা দেশে মোট ট্যানারির সংখ্যা ২১০টি হলেও সরকারের খাতায় এর সংখ্যা ১৫৫টি। হাজারীবাগের ট্যানারিতে যে ১৫৫টি কারখানা ছিল সেগুলোর কারখানার অনুকূলে সাভার ট্যানারি পল্লিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিন্ডিকেট করে চামড়ার মূল্য কমানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশ ট্যানার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহিন। তিনি বলেন, ‘হাজারীবাগ থেকে আমাদের চামড়া কারখানাগুলো গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনও সাভারের স্থানান্তরিত কারখানাগুলোর নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। ফলে কোরবানির পশুর সব চামড়া সেখানে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার মতো জায়গা ও ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ কারণে আমরা এবার চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছি না।’

 

B/T/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে