ডেস্ক রিপোর্টঃ শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। এবারের মেলায় ইটিআইএন গ্রহণ, রিটার্ন জমা, কর পরিশোধ এবং সেবাগ্রহীতার সংখ্যায় অতীতের সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।

গতকাল রাজধানীর বেইলী রোডে অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত আয়কর মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান।

মেলার প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সেবাগ্রহীতাদের ছিল স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। নির্ধারিত সময়ের এক-দুই ঘণ্টা আগেই করদাতারা এসে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় থেকেছেন। করদাতাদের উপস্থিতির কারণে শেষ দিনে রাত ১০টার বেশি সময় পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তরুণ ও নারী করদাতার সংখ্যা ছিল বেশি। এবার অনলাইনে রিটার্ন জমা, ই-পেমেন্টে কর পরিশোধকারীর সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

এনবিআর চেয়ারম্যান সমাপনী ভাষণে বলেন, ‘এবারের আয়কর মেলায় অতীতের সব হিসাব ছাড়িয়ে রেকর্ড হয়েছে। করদাতাদের অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। শেষ দিনে ৪৫টি জায়গায় মেলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মেলা শেষ হলেও কর দেওয়া ও রিটার্ন জমার সুযোগ থাকছে। এখনো যাঁরা মেলায় রিটার্ন জমা দিতে পারেননি তাঁরা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কর সার্কেলে নিয়মিত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।’

মেলায় বুথ করে কর পরিশোধের সুযোগ দেওয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান তাঁর বক্তৃতায় বেসিক, সোনালী ও জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন। তিনি পুরো সপ্তাহের বিভিন্ন হিসাব উল্লেখ করেন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের আয়কর মেলায় সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬, যা গতবারের তুলনায় ৩৯.৯০ শতাংশ বেশি। রিটার্ন জমা হয়েছে চার লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫.৩৩ শতাংশ। আয়কর আদায় হয়েছে দুই হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৩৫ শতাংশ। নতুন ইটিআইএন ৩৯ হাজার ৭৪৩। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৩৫.৮৫ শতাংশ।’

গতকাল অফিসার্স ক্লাবে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রাজস্ব কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা সুশৃঙ্খলভাবে সহযোগিতা করেছেন। বেসিক, জনতা ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আয়কর মেলায় বুথ করে নিরলসভাবে সহায়তা করে কর পরিশোধে সুযোগ করে দিয়েছেন।

আয়কর মেলায় বেসিক ব্যাংকের বুথে কর পরিশোধ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মিরপুরের বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের বুথে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। মাত্র ১২ মিনিটে কর জমা দিয়েছি। আমি তাঁদের সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট।’

আরেক করদাতা মালা রহমান মেলায় সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার প্রথম রিটার্ন জমা দিয়েছি। শেষ দিনে ভিড় বেশি ছিল। তার পরও এনবিআর কর্মকর্তারা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।’

তবে মেলায় উপস্থিত অনেক করদাতা শেষ দিনের উপচে পড়া ভিড়ে ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষায় থেকে রিটার্ন জমা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এনবিআর কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে ভবিষ্যতে আরো বেশি সংখ্যক স্থানে আয়কর মেলা আয়োজনের দাবি জানান।

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা করদাতা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বেইলী রোডে আসতে-যেতে প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগছে। এ ছাড়া শেষ দিনে এত ভিড় যে মেলায় প্রবেশ করতেই হিমশিম খেয়েছি। এরপর ভিড় ঠেলে লাইন করে রিটার্ন ফরম পূরণ, রিটার্ন ফরম জমা, কর পরিশোধে আরো প্রায় দুই ঘণ্টা লেগেছে। বাড়ির কাছে আয়কর মেলা হলে সময় কম লাগত। এতে করদাতার সংখ্যা বাড়ত বলে মনে করছি।’

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে