ডেস্ক রিপোর্ট : জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তিল চাষ। বিশেষত তিল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর ভেজষ গুণ অনেক বেশি। এ কারণে এর বাণিজ্যিকি গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকদের মাঝে তিল চাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি জমিতে তিল চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে তিল চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রায় তুলানায় ৭৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৭২০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৪৫৫ হেক্টর, শালিখায় ১ হাজার ২০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন তিল উৎপাদিত হবে। মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল তিল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে মোট চাষকৃত তিলের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বিনা তিল-১ ও বিনা তিল-২ মাঠ পর্যায়ে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চফলনশীল বিনা তিল-৩ ও বিনা তিল-৪ নিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বারি তিল-২ ও বারি তিল-৪ চাষ হচ্ছে। এ দুটি ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত জাত মোট তিল চাষ হওয়ার জমির প্রায় ৮০ শতাংশে চাষ হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ জমিতে স্থানীয় জাতের তিল চাষ হয়েছে। উচ্চফলনশীল এসব জাতের উৎপাদন ক্ষমতা স্থানীয় জাতের তুলনায় প্রায় ২ গুণ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। সাধারণ জাতের তিল যেখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১ মেট্রিক টন। সেখানে বিনা ও বারির উচ্চফলশীল তিল হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় প্রায় ২.৫ মেট্রিক টন। তিল চাষ সফল করতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া ভালো থাকায় মাঠে ফসলের অবস্থা ভালো। এ বছর তিলের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা।
সদর উপজেলার উপজেলার জাগলা গ্রামের কৃষক ইলিয়াস হোসেন ২ একর জমিতে বিঘা জমিতে বিনা-২ জাতের তিল চাষ করে প্রায় ৬০ মণ তিল পাবেন বলে আশা করছেন। সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক সাদেক মন্ডল বলেন, চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে বিনা-১ জাতের উচ্চফলনশীল তিল চাষ করেছেন। যা থেকে তিনি ১৫ মণ তিল পাবেন বলে আশা করছেন।
মাগুরা পরমাণু কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সম্পা রাণী ঘোষ বলেন, বিনা তিল-১,২,৩ ও ৪ সহ মোট ৪টি জাতই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে চাষ করার জন্য ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তবে বিনার এসব জাতগুলোর মধ্যে বিনা-১ তিল বিভিন্ন খাদ্য সমগ্রীতে ব্যবহারের জন্য ব্যাবসায়ীদের কাছে এটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাধারণ জাতের তুলনায় এটি দেখতে সুন্দর। রং সাদা। এর তেল খুবই উৎকৃষ্ট মানের। এছাড়া এটি ফাস্ট ফুডসহ বিভিন্ন খাদ্য সমগ্রীতে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে বাজারে তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকরা বিনা-১সহ অন্য ৩টি জাত চাষ করে দেশের ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা। এ ছাড়া তিলের বিভিন্ন ভেজষ গুণ রয়েছে। তিলের তেল রান্নায় ব্যবহার করলে মানব দেহের বিভিন্ন রোগ- বিশেষত কলোস্ট্রল, ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখাসহ এটি ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় জাতের তিল সাধারণ দেখতে কালো রং এর হয়। কিন্তু বারি-২ জাতের তিল দেখতে কালচে রং এর এটি মৌসুমের শুরুতে আগাম বপনের জন্য উপযোগী। সাধারণ জাতের তিলের তুলনায় তেলও বেশি হয়। এ ছাড়া বারি-৪ জাত দেখতে গাঢ় লালচে ধরনের। উভয় জাতই পরিবর্তিত আবহাওয়ায় চাষাবাদের জন্য সহনীয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করার ফলে এ বছর জেলায় স্থানীয় জাতসহ প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে উচ্চফলনশীল বিনা ও বারি জাতের তিল চাষ হয়েছে। এটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া তিল মানব দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা রাখে। এ কারণে কৃষকদের কাছে তিল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে