সাব্বির আলম বাবু, ভোলা প্রতিনিধিঃ পরিবহণ ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম পল্টু ভারতে চিকিৎসক দেখাতে যাবেন।

গত মাসে তিনি পাসপোর্টের আবেদন করেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হলেও তার পাসপোর্ট হয়নি। ভোলা পাসপোর্ট অফিস থেকে তাকে ডেকে নানা সমস্যা তুলে ধরা হয়।

বিয়ের কাবিননামা দেখাতে বলা হয়। ১৩ বছর আগের কাবিননামা হন্যে হয়ে খুঁজছেন পল্টু। একই কারণে ৬৬ বছর বয়সি এক নারীকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ-নানা অজুহাতে শ শ আবেদনকারীকে মাসখানেক ঘুরিয়ে এবং ঘুস নিয়ে পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন স্টাফরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোলার পাসপোর্ট অফিসে ‘টাকা দিলেই সব মুশকিল আসান’ হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা সোলায়মানের অভিযোগ-তিনি পবিত্র হজে যাবেন।

৩০ বছর আগের কাবিননামা তাকে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কাবিননামা দেখাতে না পারায় তাকে হয়রানি করতে শুরু করেন পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকসহ স্টাফরা।

৫-৬ দিন ঘোরাঘুরির পর এক দালালকে তিন হাজার টাকা দিলে তার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ভোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, পাসপোর্ট দপ্তরের অভিযোগ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ১০-১৫ জন প্রেস ক্লাবে আসেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ সফিকুল হক জানান, মানুষকে হয়রানি করার এক উদাহরণ হলো-জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফাই করতে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের অযথা নির্বাচন কার্যালয়ে পাঠানো। কিন্তু খুব সহজেই পাসপোর্ট কর্মকর্তারা এনআইডি ভেরিফাই করতে পারেন। পুরাতন পাসপোর্টে ভুল তথ্য থাকলে তা সংশোধন না করে বরং আবেদনকারীকে এনআইডি সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এমন একাধিক অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চার সদস্যের প্রতিনিধি দল পাসপোর্ট দপ্তরে যায়। দুদক তদন্ত দলের সহকারী পরিচালক জানান, হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন।

কিডনি রোগে আক্রান্ত ৬০ বছর বয়সি অরুনা ভাওয়াল চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন। তিনি জানান, এ বছরের ২৭ এপ্রিল পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম বেলকা রায়। আগের পাসপোর্টে ছিল বেলকা রানী রায়। এ অজুহাতে তার পাসপোর্টের নবায়ন হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মায়ের নাম সংশোধন করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী পাসপোর্টের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চান-কাবিননামার প্রয়োজনীয়তা কেন? সভার ৫০ জনের সবাই জানান তাদের কাবিননামা সংরক্ষণে নেই। আবেদনকারীরা কেন বঞ্চিত হবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সহকারী পরিচালক জানান, তাদের বিধিতে স্ত্রী শনাক্তে কাবিননামার কপি জমা দেওয়ার কথা বলা আছে। জেলা প্রশাসক জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবা, মা ও স্ত্রীর নাম থাকায় হয়রানি না করার জন্য বলা হয়। এরপরও সমস্যার সমাধান নেই। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এর আগে ওই দপ্তরের সামনে থেকে কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করা হয়। ভোলার নাগরিক কমিটির সভাপতি আবু তাহের জানান, পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে