হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুটি উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কোনো হতাহত না হলেও উড়োজাহাজ দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার সংলগ্ন এলাকায় বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের মধ্যে রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আজ সোমবার দুর্ঘটনা কবলিত দুটি উড়োজাহাজ পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

পরিদর্শনকালে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জানা যায়, বিমানবন্দরে বিমানের হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। রোববার দুপুরে বিমানের আরেকটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যাঙ্গারের দিকে নেওয়া হয়। হ্যাঙ্গারের ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশের সঙ্গে ভেতরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনের অংশে ধাক্কা লাগে। এতে দুটি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্রাউন্ডেড হয়।

বিমান সূত্রে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশে থাকা ওয়েদার রাডার নষ্ট হয়ে গেছে। আর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের লেজের ভার্টিক্যাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙে গেছে।

এ ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে উড়োজাহাজ দুটি মেরামতের জন্য। এ ছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই। বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিস্তারিত জানা যাবে।’

বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) তাহেরা খন্দকার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তাঁকে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন জবাব মেলেনি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ৪ টি, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ৩ টি, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ৪ টি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ৬টি এবং ৫টি ড্যাশ-৮।

বিমানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় উড়োজাহাজ কেনা, লিজ নেওয়া, মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ কেনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরই উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। আর উড়োজাহাজ দুটি বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চ ও মে মাসে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় এ ইঞ্জিনটিও। আবারও ভাড়ায় আনা হয় ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও বিকল হয়। তারপর ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এভাবে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে নিট ক্ষতি ১১শ কোটি টাকা। এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে বিমান আয় করে ২২শ কোটি টাকা। তবে দুটি উড়োজাহাজের পেছনে ব্যয় হয় ৩৩শ কোটি টাকা। পরে লোকসান দিয়ে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয় বিমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে