ডেস্ক রিপোর্ট :  ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটকে শ্রেষ্ঠতম বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। আবার কেউ কেউ এই বাজেটকে নিকৃষ্টতম বাজেট বলেছেন, সেটা আবার বেশি বলেছেন। আমি বলবো এটি একটি গতানুগতিক বাজেট। এই বাজেটে মৌলিক কোনো পরিবর্তন নেই।’বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে অর্থনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের বাজেটোত্তর মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এম এম আকাশ বলেন, খেলাপী ঋণ ও অর্থ পাচারের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। খেলাপী ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়াতে পারছে না। পাশাপাশি অর্থ পাচারের কারণে আর্থিক বৈষম্য হ্রাস করাও সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বাজেটে এসব বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। তিনি ব্যাংক খেলাপী ও অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের আহবান জানান। তবে এদেরকে শাস্তি দিতে হলে বাজেট কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।এই অর্থনীতিবিদ বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে এই বাজেট বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা সরকারের আছে-কিনা। তবে বাজেট বাস্তবায়ন দু’টি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। একটি নির্ভর করবে টাকা তোলার ক্ষমতার উপর। আরেকটি নির্ভর করবে টাকা ব্যয়ের ক্ষমতার উপর।

তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, টাকা ব্যয়ের ক্ষমতা সরকারের নেই। আমরা দেখেছি, চলতি বাজেট মে মাস পর্যন্ত এডিপির মাত্র ৬৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।এম এম আকাশ আরো বলেন,বাজেটে কোন পণ্যের দাম বাড়বে আর কোন পণ্যের দাম কমবে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পরছি না।কেননা,অনেক রকম ট্যাক্স এটার মধ্যে আছে। একবার কাস্টমস ডিউটি বসছে।একবার সেলস ট্যাক্স বসছে।আবার ভ্যাট বসছে। আবার আবগারি শুল্ক বসছে। কোনো কোনো পণ্যে দুবার ভ্যাট বসছে, আবার কোনো কোনো পণ্যে ছাড় দেয়া হচ্ছে। ফলে এটার প্রভাব কি হবে তা ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

সভায় দৈনিক প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর শওকত হোসেন মাসুম বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় একটা সংস্কার আনা দরকার।তিনি বলেন,এবারের বাজেটের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ভ্যাট আইন। তাই জুলাই থেকে সাংবাদিকদের বড় কাজ হবে ভ্যাট আইনটি কীভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেদিকে নজর রাখা।ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বাজেটে বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে। কেননা, বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না হলে এটা এক ধরণের প্রতারণা।তাই বাজেট প্রক্রিয়াকে আরো বেশি গণতান্ত্রিক হতে হবে।এর সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এ আর আমান। বাজেট ২০১৭-১৮ একটি জন-বিশ্লেষণ শীর্ষক ওই প্রবন্ধে তিনি বলেন,বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জেলা বাজেট তৈরি করতে হবে।তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট সংগ্রহ প্রক্রিয়া সহজ নয়। ব্যাংক আমানতের উপর আবগারী শুল্ক আরোপ অনৈতিক। কর্পোরেট কর ও সম্পদ কর আদায়ে সরকারকে আরো মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সহ-সভাপ্রধান আসগর আলী সাবরীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে