খেলার খবরঃ ৩১৫ রানের লক্ষ্যের কাছাকাছি গিয়ে হারের মুখ দেখলো টাইগাররা। এরফলে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার আশা শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। গতকাল বাংলাদেশ ২৮ রানে হেরেছে ভারতের কাছে। ভারতের বিপক্ষে জিততে পারলে সেমিতে যাওয়ার একট সম্ভাবনা টিকে থাকত টাইগারদের সামনে। কিন্তু ভারত সে সুযোগ দেয়নি। বাংলাদেশকে বিদায় করে নিজেদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছে ভারত। ফলে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠল দলটি। গতকাল আগে ব্যাট করে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারত ৯ উইকেটে করে ৩১৪ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ৩১৫ রান। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৮ ওভারে ২৮৬ রানে অলআউট হলে ভারত জয় পায় ২৮ রানে। তবে জয়ের খুব কাছেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আর বাংলাদেশকে হারিয়ে ৮ ম্যাচে ৬ জয় আর এক ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগিতে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ভারত আছে দ্বিতীয় স্থানে। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে অস্ট্রেলিয়া। বিজয়ী দলের পক্ষে রোহিত শর্মা ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন।

জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ৩১৫ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। আর ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধানী জুটিতে বড় স্কোর গড়তে পারেনি তামিম-সৌম্য জুটি। ৩৯ রানের জুটি গড়ে আউট হন ওপেনার তামিম ইকবাল। মোহাম্মদ সামির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩১ বলে ২২ রান করেন এই ওপেনার। দলীয় ৭৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার বিদায় অপর ওপেনার সৌম্য সরকারের। হার্ডিক পান্ডিয়ার বলে কোহলিকে সহজ ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ৩৮ বলে ৩৩ রান করেন সৌম্য। দলীয় ৭৪ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে দায়িত্ব ছিল সাকিব-মুশফিক জুটির উপর। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান করে দলকে শতরানের কোটায় পৌছে দেয় এই জুটি। তবে দলীয় ১২১ রানে মুশফিকের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। ২৩ বলে ২৪ রান করে যুজভেন্দ্র চাহালের বলে মোহাম্মদ শামির কাছে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। মুশফিকের বিদায়ে সাকিবের সাথে জুটি করে ভালো করার সুযোগ ছিল লিটন কুমারে সামনে। কিন্তু দলের এই বিপদে ভালো করতে পারলেননা লিটনও। দলীয় ১৬২ রানে ফিরতে হয় তাকেও। পান্ডিয়ার বলে কার্তিকতে ক্যাচ দেয়ার আগে ২৪ বলে ২২ রান করেন লিটন। ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি মোসাদ্দেকও। মাত্র ৩ রান করে ভুমরাহ এর বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাকে। ফলে ১৭৩ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের সামনে একমাত্র ভরসা ছিল সাকিব আল হাসানই। কিন্তু দলীয় ১৭৯ রানে সেই সাকিবই মাঠ ছাড়লে সব আশা শেষ হয় বাংলাদেশের। পান্ডিয়ার বলে কার্তিককে ক্যাচ দেয়ার আগে সাকিব করেন ৬৬ রান। ৭৪ বলে ৬ চারে সাজানো ছিল সাকিবেরর ইনিংসটি। আর প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে ৫০০ রান ও ১০ উইকেটে নেওয়ার কীর্তি গড়লেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। এই বিশ্বকাপে দুই সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে ৫০০ রান টপকে গেছেন সাকিব। ভারতের ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্তকে ৪৮ রানে ফিরিয়ে নেন এই আসরের ১০ নম্বর উইকেট। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রান করেই অনন্য এক ডাবলের কীর্তি গড়লেন সাকিব। সাকিবের বিদায়ে দলের সামনে জয়ের আর কোন পথ খোলা ছিলনা। বাকিদের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট করতে হয়েছে পরাজয়ের ব্যবধান কমাতেই। সাব্বির-সাইফউদ্দিন জুটি সেটাই করেছে। সেই সাথে দলকে জয়ের স্বপ্নও দেখান এই জুটি। কারণ এই জুটি ভাংগার আগেই বাংলাদেশ পৌছে গেছে ২৪৫ রানে। এই জুটির সংগ্রহ ৬৬ রান। সাব্বিরের বিদায়ে ভাংগে এই জুটি। ভুমরাহ এর বলে বোল্ড হওয়ার আগে সাব্বির ৩৬ বলে করেন ৩৬ রান। ব্যাট করতে নেমে ৮ রানে অধিনায়ক মাশরাফি আর ৯ রানে আউট হন রুবেল হোসেন। তবে টিকে থেকে দলকে স্বপ্ন দেখিয়েই গেছেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু তাকে সার্পোাট দেয়ার মতো কেউ ছিলনা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৮ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে করে ২৮৬ রান। সাইফউদ্দিন ৩৮ বলে ৯ চারে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের পক্ষে ভুমরাহ ৪টি আর পান্ডিয়া নেন তিনটি করে উইকেট।

এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারত ৯ উইকেটে করে ৩১৪ রান। ভারতের স্কোরটা আরো বড় হতে পারত। তবে সেটা হয়নি কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে কারনে। গতকাল ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে খেলা শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। ইনিংসের শুরুতেই রোহিত শর্মাকে সাজঘরে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ক্যাচ ছেড়ে সেই সুযোগ নষ্ট করেন তামিম ইকবাল। ফলে ১০ রানে লাইফ পাওয়া রোহিত শর্মা ব্যাট হাতে রীতিমত ঝড় তুলেছেন। আর ওপেনিং জুটিতেই ১৮০ রানের পার্টনাশীপ গড়ে ভারতকে বড় স্কোরে নিয়ে গেছেন। ওপেনার লোকেশ রাহুলও ফিফটি করে আউট হলেও সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছেড়েছেন রোহিত। এই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে এখন তিনি যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা ৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ৫১৬ রান করার ডেভিড ওয়ার্নারকে ছাড়িয়ে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ৫২১ রান এখন রোহিতের। দলীয় ১৮০ রানে রোহিত শর্মাকে বিদায় করে পার্ট-টাইম বোলার সৌম্য সরকার এই জুটি ভাংগেন। তবে মাঠ ছাড়ার আগেই দলকে সেঞ্চুরিসহ ১০৪ রানের স্কোর উপহার দেন শর্মা। মাত্র ৯৫ বলে ৭ চার আর ৫ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস সাজান রোহিত। রোহিতের বিদায়ে বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি অপর ওপেনার লোকেশ রাহুলও। দলীয় ১৯৫ রানে রুবেল হোসেনের বলে ফিরতে হয় তাকেও। আউট হয়োর আগে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল। ৯২ বলে ৬ চার আর এক ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। দলীয় ১৯৫ রানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণের চেস্টা করে টাইগার বোলাররা। কিছুটা সফলও হয়। কারণ ব্যাট করতে নেমে বড় ইনিংস খেলতে পারেনি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। না হলে ভারতের স্কোরটা আরো বড় হতে পারত। দলীয় ২৩৭ রানে ফিরতে হয় কোহলিকে। মোস্তাফিজের করা শর্ট বল পেয়েই ব্যাট হাঁকিয়ে বসেন কোহলি, আর তাতেই রুবেলের হাতে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আউট হওয়ার আগে কোহলি ২৭ বলে করেন ২৬ রান। ব্যাট করতে নেমে মোস্তাফিজকে চেনার আগেই উইকেট হারায় হার্ডিক পান্ডিয়া। রানের খাতা খোলার আগেই মোস্তাফিজের বলে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় পান্ডিয়াকে। ফলে ২৩৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ভারত। ২৩৭ রানে ৪ উইকেট হারানো ভারতকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতীয় মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ঋশিভ পান্ত। তাকে অবশ্য ফিরান সাকিব আল হাসান। সাকিবের বলে মোসাদ্দেককে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ৬ চার আর এক ছক্কায় ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ব্যাট করতে নেমে দীনেশ কার্তিক মাত্র ৮ রানে করেই মোস্তাফিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। ফলে ২৯৮ রানে ভারত হারায় ৬ উইকেট। তিনশত রানের আগে ভারত ৬ উইকেট হাররালেও অভিজ্ঞ ধোনি রানের চাকা সচল রেখে দলকে তিনশত রানের কোটায় নিয়ে যান। কিন্তু দলীয় ৩১১ রানে ধোনিকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংস টেনে ধরেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজই। মোস্তাফিজের বলে সাকিবকে ক্যাট দিয়ে ফেরার আগে ধোনি করেন ৩৩ বলে ৩৫ রান।

ব্যাট করতে নেমে ভুবনেশ্বর কুমার আর মোহাম্মদ সামি মোস্তাফিজের বলের সামনে দাড়াতেই পারেনি। মাত্র ২ রান করে ভুবনেশ্বর কুমার রান আউট হওয়ার পর সামিকে ১ রানে বোল্ড করে ফিরান মোস্তাফিজ। ফলে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে আটকে যায় ভারতের ইনিংস।

শেষ ওভারেই ধোনি, ভুবনেশ্বর কুরাম আর সামিকে আউট করে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন মোস্তাফিজ।

এর আগে আফগানদের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন সাকিব। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান একাই নেন ৫ উইকেট। সাকিব, রুবেল আর সৌম্য নেন একটি করে উইকেট।

পিবিএ/এএইচ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে