চলতি বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন হবে একই জেলার অন্য উপজেলায়। মূল্যায়ন শেষে ফল তৈরির কাজটিও করা হবে একই উপজেলায়।

দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে প্রবর্তনের এক বছরের মধ্যেই নিজ উপজেলায় উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অপরাধী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি পরীক্ষা সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রাথমিক এবং ইবতেদায়ি স্তরে বৃত্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ স্তরের বৃত্তির অর্থ বরাদ্দ থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এ কারণে ওই মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে গত বছর নিজ উপজেলায় উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু নিজ উপজেলায় উত্তরপত্র মূল্যায়িত হলে ম্যানিপুলেটের (প্রভাব বিস্তার) সুযোগ থাকে। এ কারণে মূল্যায়নে ম্যানিপুলেশন ঠেকাতে এক উপজেলার উত্তরপত্র আরেক উপজেলায় মূল্যায়নের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আগামী ১৭ নভেম্বর পিইসি এবং ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথমদিন উভয় স্তরে নেয়া হবে ইংরেজি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় আগের মতোই ৬০ টাকা করে ফি নেয়া হবে। ফাঁস রোধে ৩২ সেট প্রশ্ন করা হবে এবার। এর মধ্যে ৮ সেট লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করে ছাপানো হবে।

সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা উত্তরপত্র মূল্যায়নে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। তখন আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, এক উপজেলার উত্তরপত্র মূল্যায়ন হবে আরেকটিতে। যে উপজেলায় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হবে সেই উপজেলায় নম্বরপত্র টেবুলেশন করে সিল-স্বাক্ষরসহ সংশ্লিষ্ট (যেখানে পরীক্ষা হয়েছে) উপজেলায় পাঠানো হবে। এতে কোনো অনিয়ম বা উত্তরপত্র মূল্যায়নে বিলম্ব হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। যেসব বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কেন্দ্র সচিব হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা অন্য কাউকে কেন্দ্র সচিব হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

উল্লেখ্য, এই সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তী শিক্ষা ও চাকরিজীবনে কোনো কাজে আসে না। কিন্তু এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি জড়িত। ফলে একশ্রেণির অভিভাবকের ইচ্ছায় কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তা উত্তরপত্র বা টেবুলেশন শিটে জালিয়াতি করে নম্বর কম-বেশি করে থাকেন। গত কয়েক বছর ধরে সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র নিয়ে এমন জালিয়াতির অভিযোগ আসছে। এসব কারণে উত্তরপত্র মূল্যায়নে সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি ওঠে।

বৃত্তি বাড়ানোর প্রস্তাব : ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বৃত্তির সংখ্যা ও অর্থের সম্মানীর পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রাথমিকে ৮২ হাজার ৫০০ এবং বাকিরা ইবতেদায়ি স্তরের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রাথমিকে বৃত্তির সংখ্যা আরও ১৭ হাজার ৫০০ বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। এখন এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্যালেন্টপুলে নির্বাচিতরা মাসে ৩০০ টাকা আর সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা ২২৫ টাকা করে সম্মানী পেয়ে থাকে।

J/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে