ডেস্ক রিপোর্ট : জেলায় পাটের আঁশ ছাড়িয়ে বাড়তি আয় করছেন নারীরা। এবছর সাড়ে ৩৬ হাজার নারী পাটের আঁশ ছাড়িয়ে বাড়তি আয় করছেন। ঘুচিয়েছেন মৌসুমি বেকারত্ব, সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
কৃষক ও নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা আঁশ ছাড়িয়ে ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আয় করছেন নারীরা। অনেকে এর বেশিও আয় করছেন। প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্তু চার মাস এ কাজের সুযোগ থাকে। এ বছর পাটের আবাদ বেশি এবং ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষক, মজুর, ব্যবসায়ী সবাই খুশি। এখানকার ভৌগোলিক অবস্থা পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অসংখ্য খাল-বিল, জলাশয় ও নদী থাকায় এবং এবার প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বছর পাটের জাগ দিতে কৃষকের কোনো সমস্যা হয়নি।
জানা গেছে, পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজে বেশি অংশগ্রহণ নারীদের। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গৃহবধূরাও এ কাজে অংশ নিচ্ছেন। নড়াইল সদরের ধোপাখোলা ও কাড়ার বিল এলাকায় রাস্তার দুই পাশের বিলে প্রতি বছর কয়েকশ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। প্রচুর উন্মুক্ত জলাশয় থাকায় কৃষকরা জুলাই থেকে এখানে পাটের জাগ দেয়া শুরু করেন। এ সময় থেকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কয়েকশ নারী পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে অংশ নিতে আসেন। সংসারের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি তারা এ কাজ করে বাড়তি আয় করেন। এ কাজে অংশগগ্রণকারী নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাগ দেয়া পাট খাল থেকে তুলে আঁশ ছাড়ানোর কাজটা করেন তারা। মালিক আঁশ নিয়ে যান আর তারা নেন পাটকাঠি। পরে সেই পাটকাঠি তারা শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করেন। অনেক কৃষক আবার নারী শ্রমিকদের নগদ মজুরি দেন। ২০-৩০টি পাট দিয়ে একটি আঁটি বাঁধা হয়। এক কুড়ি (২০ আঁটি) পাটের আঁশ ছাড়ালে নারী শ্রমিকরা পান ৩৫-৪০ টাকা। একজন নারী দিনে ৫-৭ কুড়ি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। সদরের মুলিয়া সড়কের রাস্তার দুপাশে প্রতিদিন শত শত নারী এ কাজ করেন।
কাজ করতে আসা শহরের দক্ষিণ নড়াইলের দিঘির পাড় এলাকার রহিমা বেগম বলেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে তিন-চার মাস এ কাজ করেন। এ বছরও প্রায় দেড় মাস ধরে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্তু কাজ করে দৈনিক তার আয় হয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। আরো দুই মাস কাজের সুযোগ আছে বলে জানান তিনি।
ধোপাখোলা গ্রামের দুর্গা রানী জানান, প্রতি বছর প্রায় ৫০০ নারী নড়াইল-গোবরা সড়কের দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন। এই করে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।
নড়াইল-মাগুরা সড়কের ময়নখোলা এলাকায় চিত্রা নদীর পাশে এক স্থানে বসে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন প্রায় ৬০ জন নারী। এখানে ময়নখোলা গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, তারা আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠি নিয়ে যান। পুরো মৌসুমের পাটকাঠি জড়ো করে বাজারে বিক্রি করেন। গত বছর তিনি ৪২ হাজার টাকার পাটকাঠি বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, এ বছর জেলায় ২৩ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এবার ৩৬ হাজার ৪৫০ জন নারী পাট ছাড়ানোর কাজ করছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ৭০০, লোহাগড়া উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০০ এবং কালিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ২৫০ জন। পাট উৎপাদন বেশি হলে গ্রামের এসব খেটে খাওয়া নারীর মৌসুমি আয় আরো বাড়বে বলে তার আশা করে তিনি।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আসাদুজ্জামান মুন্সি বলেন, পাট পচানোর পর এক ধরনের গন্ধ হয়। তাতে শ্রমিকদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। এটা ক্ষতিকর নয়। তবে যারা প্রতিদিন এ কাজ করেন, তাদের মুখে মাস্ক পরা উচিত।

বি/এস/এস/এন


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে