জাহাঙ্গীর কবির, উত্তরা ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণখানে সিকিউরিটি সার্ভিসে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণখান থানা পুলিশ। তবে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

দক্ষিণখান থানাধীন কাঁচাবাজারের হাসান মাহমুদ কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বি-এ্যালার্ট সিকিউরিটি সার্ভিস থেকে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অভিযানের পর থেকে বি এ্যালার্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিয়াজুল হক (৪২), উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও রিয়াজুলের স্ত্রী মোছা আনোয়ারা খানম আলো (৩৩) সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পলাতক রয়েছে।

চাকুরির উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থেকে দক্ষিণখানের ওই সিকিউরিটি গার্ড সার্ভিস অফিসে এসেছিলেন আকাশ মিয়া। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ফোন করি। তারপর চাকুরির আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় ঢেকে নিয়ে আসা হয়। পরে রেজিস্ট্রেশন করার কথা বলে প্রথমে ৫০০ টাকা নেয়। তারপর সহকারী সুপারভাইজার পদে কনফার্মের কথা বলে এবং থাকা খাওয়ার জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেয়া হয়।’

আকাশ মিয়া বলেন, ‘আমাকে সহকারী সুপারভাইজার পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গুলশানে সিকিউরিটি গার্ডের জন্য পাঠায়। কিন্তু তাদের কথা ছিল, যে টাকা নিয়েছে সেই টাকা দিয়ে খাওয়াবে। কিন্তু খাবার দেয়নি’।

রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এসেছিলে রুবেল ও বায়োজিদ নামের দুই চাচাতো ভাই। ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমরা ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকায় আসি। আসার পর পরই বি-এ্যালার্ট সিকিউরিটি গার্ড অফিসের লোকজন আমাদেরকে সহকারি ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগের জন্য রেজিস্ট্রেশন করানোর কথা বলে প্রথমে ৫০০ টাকা করে ১ হাজার টাকা নেয়। তারপর নানা বাহানায় ১০ হাজার করে দুই জনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিছে। পরে আর চাকরি দেয় নাই।’

রুবেল ও বায়োজিদ বলেন, ‘আমরা গ্রাম থেকে আসার সময় বাসায় খাওয়া ধাওয়া করে এসেছিলাম। তারপর আমাদের কাছে যতো টাকা ছিল, তারা সব নিয়ে নিয়েছে। যার কারণে আমরা দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি। কিন্তু তারা চাকরিও দেয় নাই, আমাদেরকে খাবারও দেয়নি।’

তারা আরো বলেন, আমারা দেখেছি পদ অনুসারে তাদের মাসিক ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। পরে সিকিউরিটি অফিসে যোগ দিলে তাদের নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হতো প্রতি মাসে নতুন নতুন চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে হবে এবং নতুন প্রার্থী সংগ্রহের ভিত্তিতে কমিশন হিসেবে তাদের বেতন দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক মো. নাঈম হোসেন বলেন, ‘একজন ভুক্তভোগীর প্রতারণার অভিযোগে বি-এ্যালার্ট সিকিউরিটি সার্ভিস থেকে ৯ নারীসহ ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে একজনের অভিযোগ পেয়েছি। পরে এখন অনেক লোকের অভিযোগ পাচ্ছি।’

দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল আজিজুল হক মিঞা বলেন, ‘আটককৃতদেরকে ঝাচাই বাছাই চলছে। ঝাচাই বাছাই শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।’

ভুক্তভোগী চাকরি করতে আগ্রহীরা টাকার বিনিময়ে যোগ দেওয়ার পর জানতে পারেন বেতন নয়, নতুন চাকরি প্রত্যাশীকে এনে কমিশন আদায় করাটাই তাদের চাকরি।

দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। দীর্ঘদিন দক্ষিণখানে বি-এলার্ট সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি. নামে অফিস খুলে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ লোকদের প্রলুব্ধ করতো। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ফরম, ইউনিফরম কেনা বাবদ টাকা নিয়ে সেটা আত্মসাৎ করতো। চাকরি না পেয়ে কেউ টাকা ফেরত চাইলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হতো বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, প্রতারণার বিষয়ে বুঝতে পেরে জামানতের টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা করতো এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতো। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে