ডেস্ক রিপোর্টঃ দীর্ঘ ষাট বছরের কাক্সিক্ষত দোহাজারি-গুমদুম রেল সড়কের নির্মাণ কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে (আরবি) ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। এতে পাঁচটি দেশের নয়টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
পর্যটনের শহর কক্সবাজেরর সঙ্গে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপনের জন্য ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার এবং মিয়ানমার সীমান্তে রামু থেকে গুমদুম ব্রডগেজ লাইন নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করা হয়।
প্রকল্পের উপপরিচালক (ডিডি) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, দরপত্রে পাঁচটি চীনের এবং বাংলাদেশ, ভারত, স্পেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার একটি করে প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং শিগগিরই দরপত্র মূল্যায়ন কাজ শেষ হবে।
১৮৯০ সালে ব্রিটিশ সরকার এই রেল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করে। এরপর পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে এর সক্ষমতা যাচাই করে। এরপর ১৯৭১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত জাপান রেলওয়ে টেকনিকেল সার্ভিস আবার এর সক্ষমতা যাচাই করে।
কিন্তু প্রকল্পের কাজ আর শুরু হয়নি। স্বাধীনতার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পুনরায় এর সক্ষমতা যাচাই করা হয়।
বর্তমান সরকার ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ স্লোগানে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমারকে নিয়ে অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করার লক্ষ্যে ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ের অংশ হিসেবে এই প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জমি অধিগ্রহণের পর প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে। এ ব্যাপারে সচিব বলেন, ‘আগামী মার্চে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরুর লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি’।
প্রকল্প ব্যয়ের মোট ৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে এবং গত নভেম্বরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্প ব্যয়ের ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে।
ট্রান্স এশিয়ান রেল লিংক নেটোয়ার্কেও আওতায় সাউথ এশিয়ান সাব-রিজনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (এসএএসইসি) রেল কানেকটিভিটির কর্মসূচিতে বিনিয়োগের অংশ হিসেবে এডিবি ইতিমধ্যেই চার ধাপে দেড়শ’ কোটি টাকা ছাড় করেছে।
তিনি জানান, এডিবি প্রথম ধাপে ২৪ শ’ কোটি, দ্বিতীয় ধাপে ৩২ শ’ কোটি, তৃতীয় ধাপে ৪ হাজার কোটি এবং চতুর্থ ধাপে ২৪ শ’ কোটি টাকা ছাড় করে।
রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পর নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের মার্চ নাগাদ শুরু হবে এবং ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ইতিমধ্যেই এডিবির একটি টিম এর সক্ষমতা যাচাই করেছে।
প্রকল্পের ১২৯ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ, সাতকানিয়া এবং লোহাগড়া উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার, চকড়িয়া, রুমা, কক্সবাজার সদর এবং উখিয়া উপজেলা আর বান্দরবান জেলার গুমদুম উপজেলাসহ মোট ১১টি রেল স্টেশন থাকবে।
পাশাপাশি মোট ৫২ টি বড় এবং ১৯২ টি ছোট রেল সেতু ও কালর্ভাট, ১১৮টি লেভেল ক্রসিং, হাতির চলাচলের জন্য দুইটি আন্ডার পাস এবং পাঁচটি ওভার পাস নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় দোহাজারি থেকে রুমা পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, রুমা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক এবং রুমা থেকে গুমদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পে উন্নয়ন সহযোগীদের তহবিল বরাদ্দের অনিশ্চয়তায়র কারণে একটি সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে উন্নিত করতে দেরি হচ্ছে।
গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই ন্যাশনাল ইকোনোমিক কাউন্সিল (একনেক) এই প্রকল্পের জন্য দোহাজারি থেকে কক্সবাজার হয়ে রুমা থেকে গুমদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ নির্মাণের অনুমোদন দেয়। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকার সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ থেকে ডুয়েল গেজে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি হয়। প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৭৪২ একর জমি অধিগ্রহণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্প সম্পন্ন হলে এটি দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও পর্যটন শহর কক্সবাজারকে ঘিরে অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায় প্রকল্পটি ট্রান্স এশিয়ান কোরিডোরের সঙ্গে যুক্ত হবে যা দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অবদান রাখবে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে