ডেস্ক রিপোর্টঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত আজ এক বাণীতে তিনি এ আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেই- এটাই হোক এবারের বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সকলের অঙ্গীকার।’
আবদুল হামিদ বলেন, অগামীকাল ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এ দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতার দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়েই বাঙালির বিজয় পূর্ণতা লাভ করে।
তিনি বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় এ দিনে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনযজ্ঞের নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণহত্যা চালায়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দেন। এরপরই পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে আটকে রাখে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ৯ মাস ১৪ দিন কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রেরণার উৎস।
তিনি বাণীতে উল্লেথ করেন, বঙ্গবন্ধু বিজয়ের বেশে দেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার সোনার বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র’।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায় তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তাঁর প্রাণ দেবে’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখে গেছেন। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তাঁর আদর্শ মুছে দিতে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল নিখাদ ও গভীর ভালোবাসা এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দিকালীন তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা’। দেশ ও জনগণের প্রতি এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার উদাহরণ বিশ্বে বিরল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে অগ্রগতির সে যাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।
আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশের পরিণত হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ্্। এ ছাড়া উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।
বি/এস/এস/এন
