tula-768x421

আসাদুজ্জামান সুজন, নীলফামারীঃ দেশের ৬০ লাখ বেল তুলা চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করা হয়। তবে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে উত্তারাঞ্চল বেশ সম্ভাবনাময়। দেশের যে পতিত জমি রয়েছে সেখানে তুলা উৎপাদন করে একশ’কোটি ডলার আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব।

সোমবার দিনভর নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড’র ডায়াজ হোটেলে আয়োজিত “বুষ্টিং কটন প্রোডাকশন ইন নর্থ-বেঙ্গল এ্যান্ড ইটস প্রবলেম এ্যান্ড প্রসপেক্টাস” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ কটন ডেভেলপমেন্ট (বিসিডিবি) বোর্ড, নীলফামারী বণিক সমিতি, জেরিন টেক্স, আরএমজি ক্রোনিক্যাল এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরএমজি ক্রোনিক্যালের সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিসিডিবির নির্বাহী পরিচলক ড. ফরিদ উদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, দেশের প্রায় সাত লাখ হেক্টর পতিত জমিতে তুলা উৎপাদন করা সম্ভব। আর এসব পতিত জমিতে তুলা উৎপাদন করা গেলে একশ’ কোটি ডলার আমদানি কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, দেশের সিংহভাগ পতিত জমি এখন উত্তারাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। এ জন্য তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উত্তারাঞ্চল সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। দেশে এখন ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে দেশে তুলার চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ বেল। দেশের সাত লাখ হেক্টর পতিত জমিতে ২০ লাখ বেল তুলা উৎপাদনে কার্যক্রম শুরু করবে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর লবনাক্ত পতিত জমি রয়েছে সেখানে তুলা আবাদ বাড়ানো হচ্ছে। উত্তারাঞ্চলের পতিত
জমিতেও আবাদ বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

ড. ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) তুলা আমদানি নির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর তুলা উৎপাদনে সম্ভাবনাময় অঞ্চল হতে পারে উত্তারাঞ্চলের জেলাগুলো। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের ৬০ হাজার হেক্টর তামাক আবাদি জমিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে আবাদ বাড়ানো হবে। শুধুমাত্র রংপুরে প্রায় এক লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব।

বক্তারা বলেন, দেশের তুলা উৎপাদন বাড়াতে হলে বিসিডিবির আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। পতিত জমিগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

জেরিন টেক্স এর কর্নধার মো. জুবের আলম বলেন, বাংলাদেশ ৬২ লাখ বেল তুলা আমদানী করে। যাতে করে অন্তত তিন শত কোটি ডলার ব্যয় হয়। আমরা যদি এক তৃতীয়াংশ আমদানী কমাতে পারি তবে একশত কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স’র জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি ফরহানুল হক বলেন, তুলা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হলে সরকারিভাবে ভর্তূকী দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

আরএমজি ক্রনিক্যাল এর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানী আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার। যার ৮০ শতাংশই গামের্ন্টস শিল্প থেকে। তুলার আমদানী ব্যয় কমাতে পারা মানেই গামের্ন্টস আরো মূল্য সংযোজন করা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মুজিবুর রহমান, নেদারল্যান্ডের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জ্যাক স্টিকমা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম ইদ্রিস, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং স্পিনফ স্টুডিও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সেমিনারটি পরিচালনা করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে