ডেস্ক রিপোর্টঃ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোন মামলা প্রত্যাহার করেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস করবে এবং জঙ্গিবাদে জড়াবে তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা দেশকে উন্নত এবং জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও স্বজনপ্রীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অপসারণ করতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাতে রোমের পার্কো দি প্রিনসিপি গ্রান্ড হোটেল এন্ড এসপিএ’তে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতির মামলা দায়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আগেই প্রত্যেক মামলার তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। মামলাগুলোর প্রকৃত অবস্থা আমরা যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে এবং এর রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আমি কোন মামলা প্রত্যাহার করিনি এবং এর অনুমতিও দেইনি, কেন আমি এটা করবো। আমি জানতাম, আমিতো কোন দুর্নীতি করিনি।’

এ সময় তিনি পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, হিলারি ক্লিনটন সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং ড. মুহম্মদ ইউনুস সে সময় তাকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দোষ ধরতে মুখিয়ে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই সময় তিন তিনবার আমার ছেলেকে এ ব্যাপারে হুমকিও দেয়।

তিনি বলেন, এটি কানাডার আদালতেই প্রমাণ হয়েছে যে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি।
‘আমি বলেছিলাম আমি দুর্নীতি করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই ক্ষমতায় এসেছি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয়,’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে আদালতে। আদালত যখন দেখেছে বিএনপি নেত্রীর মাধ্যমে এতিমের টাকার সম্পূর্ণ অপব্যবহার হয়েছে তখন আদালত তাকে এই শাস্তির রায় দেয়।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, এক্ষেত্রে আমাকে তিরস্কার এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কি যুুক্তি থাকতে পারে?

ইতালি শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপকর্মের কারণেই সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেই দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে।
তিনি বলেন,‘বিএনপি দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, দুর্নীতি ও বাংলা ভাই সৃষ্টি কওে এবং এই প্রেক্ষাপটেই আমরা জরুরী অবস্থা দেখেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা কে দিয়েছে? খালেদা জিয়ার প্রিয় ব্যক্তিত্ব। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন, ইয়াজ উদ্দীন এই তিনজনই তো তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিল। এ মামলা তো আওয়ামী লীগ দেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে এই মামলা হয় এবং পরের বছরই এর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এই মামলা ১০ বছর ধরে চলে এবং মামলার শুনানীর জন্য ২৩৬ কার্যদিবস ধার্য হয়। কিন্তুু খালেদা জিয়া আদালতে গেছেন মাত্র ৪০ দিন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার আপত্তির কারণে এই মামলায় তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয় এবং তিনি এর বিরুদ্ধে ২২টি থেকে ২৪টি রিট করেন।
‘তিনবার আদালত পরিবর্তন করে মামলাকে দীর্ঘায়িত করার পরেও যখন আদালত খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিল তখন বিএনপি এই স্বল্প পরিমান টাকার জন্য খালেদা জিয়াকে শান্তি দেয়ার যৌক্তিকতার প্রশ্ন তুলছে,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, যে টাকা খালেদা জিয়া এবং সংশ্লিষ্টরা অপব্যাবহার করেছেন সে টাকা এতিমদের জন্য এসেছিল। কিন্তুু এতিমদের পরিবর্তে সে টাকা তাদের নিজেদের তহবিলে চলে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা বলেন সেই টাকা তাদের তহবিলে রাখার ফলে দুই কোটি থেকে বেড়ে তিন কোটি হয়েছে। কিন্তুু  এতিমরা এ থেকে কি লাভটা পেল।
তিনি বলেন, ‘যদি খালেদা জিয়া বলতেন, সেই টাকা তিনি তার এতিম দুই পুত্রের জন্য রেখেছেন, তারও না হয় একটি যৌক্তিকতা ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, যখন মামলাটি করা হয় (ব্যরিষ্টার) রফিকুল হক সে সময় বলেছিলেন খারেদা জিয়া ঐ পরিমান টাকা জমা করে দিলেই মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে যাবে। কিন্তুু তিনি (খালেদা জিয়া) টাকার মায়া ছাড়তে পারেন নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন টাকার যে মূল্য ছিল তা থেকে এক কোটি টাকা দিয়ে তিনি চারটি ফ্লাট ক্রয় করতে পারতেন, এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই তিনি টাকার মায়া ত্যাগ করতে পারেন নি বলেই আজকে এতিমের টাকা আত্মস্যাতের কারণে তিনি কারাগারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরা আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এই মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে এত কোটি পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়?’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যে মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। এখানে আমাদের তো করার কিছু নেই। আর আমরা যদি করতামই তাহলে ১০ বছর তো চলতে দিতাম না। ২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসলাম, তখনই তো শেষ করতে পারতাম।’

রায় বাতিলের জন্য বিএনপির চলমান আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি’র একটি অভ্যাস আছে টাকা দিয়ে সব কিছু কিনে নেয়ার কিংবা বিচারকদের দরজায় লাথি মারার এবং মাস্তানি করার,আমরা সেটা জানি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুই ছেলে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যাদের টাকা আমরা ফেরত এনেছিলাম। তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোটের সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জনগণের জন্য কিছুই করে নাই, শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ছাড়া।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৫ সালে নির্বাচন প্রতিরোধ ও সরকার পতনের নামে এই বিএনপি জ্বালাও পোড়াও ও অগ্নিসংযোগ করে। ২০১৩ সালে ঠিক একইভাবে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছিল।
সরকার প্রধান বলেন,এই সময়ে তারা (বিএনপি-জামায়াত জোট) আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। প্রায় তিন হাজারের উপরে মানুষকে তারা আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। ওই তিন বছরে প্রায় ৫শ’ মানুষকে তারা হত্যা করেছে। পুলিশ, বিজিবি, সেনা সদস্যকে পুড়িয়ে মেরেছে।’

তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়া. আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি সহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে ।
তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী হয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। আসলো কোথা থেকে এই টাকা। তার সময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পর পর ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড বিশেষ করে কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি এবং কূটনৈতিক খাতে সাফল্যের খন্ড চিত্র তুলে ধরেন।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে দেশীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতেও তাঁদের বড় অবদান রয়েছে।

তিনি এ সময় প্রবাসীদের কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন।
এ সময় ঢাকা-রোম সরাসরি বিমান ফ্লাইট পুণরায় চালুর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকারের দুর্নীতি এবং তাদের ভুল সিদ্ধান্ত বিমানকে ধ্বংস করে দিয়েছে (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স)। ‘লাভজনক হলে আমরা পুণরায় ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালু করবো’।

 

 

 

 

 

 

B/S/S/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে