ডেস্ক স্পোর্টসঃ শুরুর ধাক্কা সামলে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরির পর ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু আচমকা ১৩ রানে শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে একসময় তিনশর নিচেই অল-আউট হয়ে যাওয়ার শংকা পেয়ে বসেছিল। হবে নাই বা কেন? ২৫৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন স্বীকৃত ৮ ব্যাটসম্যান। কিন্তু ৯ম উইকেটে রুখে দাঁড়ালেন ‘নাইটওয়াচম্যান’ খ্যাত তাইজুল ইসলাম এবং অভিষিক নাঈম হাসান। তাদের অবিচ্ছিন্ন অর্ধশতাধিক রানের জুটিতে প্রথম দিনশেষে টাইগারদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩১৫ রান।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে আজ বৃহস্পতিবার টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে ৩ বলের বেশি স্থায়ী হয়নি ওপেনিং জুটি। ডানহাতি পেসার কেমার রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে কিপার শেন ডরিচের গ্লাভসবন্দি হন ১৩ মাস পর টেস্টে ফেরা সৌম্য সরকার (০)। এরপর ইমরুল-মুমিনুলের ১০৪ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করতে থাকা ইমরুল কায়েস ৮৭ বলে ৪৪ রান করে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে অ্যামব্রিসের হাতে ধরা পড়লে ভাঙে জুটি।

লাঞ্চের পর ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন (২০)। তিন অংকের কাছাকাছি চলে যাওয়া মুমিনুলকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে দেবেন্দ্র বিশুর বলে উইকেটকিপার ডরিচের গ্লাভসবন্দি হন তিনি। মিঠুনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গত জুলাইয়ে এই উইন্ডিজের বিপক্ষেই কিংস্টনে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয়।

সাকিবকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে টেস্টে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেন মুমিনুল হক। ১৩৭ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৮ম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টেও তিনি ১৬১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এই ইনিংস খেলে সেঞ্চুরির সংখ্যায় মুমিনুল ধরে ফেললেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে। দুজনের টেস্ট সেঞ্চুরিই এখন সমান ৮টি। শেষ পর্যন্ত গ্যাব্রিয়েলের বলে ডরিচের গ্লাভসবন্দি হয়ে তার ইনিংসটি থামে ১২০ রানে।

মুমিনুলের বিদায়ের পর থেকেই দ্রুত উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত টেস্টেই ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিক গ্যাব্রিয়েলের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। আম্পায়ার প্রথম নট-আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে মুশফিককে ফেরায় উইন্ডিজ। তার ভায়রা ভাই এবং গত টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও একই পথে হাঁটেন। ৩ রান করে বোল্ড হয়ে যান গ্যাব্রিয়েলের বলে। আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ছিলেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু দলকে কঠিন বিপদে ফেলে ৩৪ রান করে গ্যাব্রিয়েলের চতুর্থ শিকার হন তিনি। ১৩ রানের মধ্যে ৪ সেরা ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ।

সাকিবের বিদায়ের সাথে সাথে কার্যত স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান সবাইকে হারিয়ে বসে বাংলাদেম। সবেধন নীলমনি হিসেবে ছিলেন মেহেদী মিরাজ। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করা এই অল-রাউন্ডার বিপদে হাল ধরতে পারেননি। ওয়ারিক্যানের বলে বোল্ড হয়েছেন ২২ রান করে। বাংলাদেশ যখন  ৩শ রানের নিচে অল-আউট হওয়ার শংকায় ভূগছিল, ঠিক তখনই অভিষিক্ত নাঈমকে নিয়ে হাল ধরলেন তাইজুল ইসলাম। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৯ম উইকেট জুটিতে এসেছে ৫৬ রান। দিনশেষে তাইজুল ৩২* এবং নাঈম ২৪* রানে অপরাজিত আছেন। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল নিয়েছেন ৪ উইকেট।

বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ মিঠুন, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, কাইরন পাওয়েল, শেই হোপ, সুনিল আমব্রিস, রোস্টন চেইস, শিমরন হেটমায়ার, শেন ডারিচ, দেবেন্দ্র বিশু, জোমেল ওয়ারিক্যান, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে