নীলফামারী প্রতিনিধিঃ “ডন কো পাকাড়না মুশকিলি নেহি না মুমকিন হ্যায়” বলিউডের কিং খান শাহরুখের চিরপরিচিত যে ‘ডন’ চরিত্রটি একজন মানুষের বাস্তব জীবনের পরিচয় হয়ে গেছে তার নাম আতাউল গণী ওরফে ডন! হ্যা বলছি নীলফামারী জেলা শহরের পৌর মার্কেটের পাহারাদার ওসমান গণীর কথা; যাকে বাস্তবে সবাই ডন নামেই চেনেন। কি গ্রীষ্ম কি শীত প্রায় সব ঋতুতে সন্ধ্যা হলেই একটা ময়লা কোর্টওয়ালা ব্যক্তিকে পৌর এলাকার শাহী পাড়ার মোড়ে দেখা যায়। গলায় সবসময় ইয়া বড় ফিতার লম্বা একটা টর্চ লাইট ঝোলানো থাকে আর চোখদুটো থাকে ঐ রাজপথের দিকে; এই বুঝি চোর এসে পড়লো!
খুব ভোরে প্রতিদিন কষ্ট করে দশ-বারো কিঃমিঃ রাস্তা ভাঙতে হয় আবার সন্ধ্যে হলেই আপন গন্তব্যে ফিরে আসতে হয়। বহুবছর ধরেই বিনিদ্র এ মানুষটা অনবরত নিশ্চুপ, নির্বিবাদ, শঙ্কাহীন প্রহরীর মত নীলফামারী পৌরমার্কেটের দোকানপাটগুলোর দেখভাল করে আসছেন। বেজায় রসিক মানুষটার সাথে চা খেতে খেতে গল্প করার এক ফাঁকে জানা গেল- সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের ডাংগাপাড়ায় তার বসবাস। বয়স কবেই সত্তর পেরিয়েছে। নয়জনের বৃদ্ধ সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এই ওসমান গণী ওরফে ডন। তার চরিত্রের একটা বিশেষ গুণ হলো যে- অন্যসব পাহারাদারের মত তিনি অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন না, একেবারে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন। দুঃখ করে কত কথাই না বললেন! “বয়স তো অনেক হইলো আর পারিনা।
অল্প কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না!” সরকারী সহযোগিতা কিংবা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার পান কি না এ প্রসঙ্গ আসতেই ডন একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন! মলিন মুখে উত্তর দিলেন- “সরকারের খাতা থেকে আমার নামটা হয়তো বাদ পড়ে গেছে, আমি তো পাহারাদার শুধুই পাহারাদার!” ডনের সুরে সুর মিলিয়ে বলতেই হয়- সত্যিই তো পাহারাদদের নাম কোন সরকারী খাতায় লিবিবদ্ধ থাকে না, যেখানে থাকে তা হলো নির্জন রাজপথ। পথ হাসলে ওরাও হাসে আর পথ কাঁদলে ওরাও কাঁদে! পথের হিসেব রেখেছো পথিক মেপেছো কি তার দুঃখ কে বা তারে আগলে রাখে সাজায় কেশ রুক্ষ?