joib_sar

বিডি নীয়ালা নিউজ(৪ই এপ্রিল১৬)-কৃষি ও প্রযুক্তি প্রতিবেদনঃ মনোরঞ্জন হাওলাদার ও খুশি রাণী দম্পতি মাত্র এক বিঘা জমিতে রবি শস্যের আবাদ করেন। শুরু থেকেই তারা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে আসছিলেন।

কিন্তু ৫ বছর আগে একটি এনজিও তাদের জৈব সার তৈরির উপকরণ সরবরাহ করে। এরপর থেকে এই দম্পতি বাড়িতেই জৈব সার তৈরি করছেন। এই সার দিয়েই চলছে তাদের চাষাবাদ, পাচ্ছেন বিষমুক্ত ফলন। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত সার বিক্রি করে মিলছে নগদ অর্থও।

শুধু মনোরঞ্জন-খুশি দম্পতি নয়, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়নের ছোট সিংগা গ্রামের অন্তত ২৫০টি পরিবারের চাষাবাদ ও উপার্জনের গল্প এখন এ রকম।

ওই গ্রামের মানুষ এরইমধ্যে কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সিংগা গ্রাম। সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এ গ্রামের শতকরা ৯০ শতাংশ পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ফসলের খেত উঁচু হওয়ায় এ গ্রামে রবি শস্যের আবাদ বেশি। বর্তমানে গ্রামের কৃষকরা জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সবজি উৎপাদন করছেন,যা উপজেলার ৪০ শতাংশ সবজির চাহিদা পূরণ করছে।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আগে বছরের পর বছর জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে নানা রকমের সমস্যায় পড়তেন তারা। এতে ফসলের উৎপাদন খরচও হতো বেশি। ৫ বছর আগে জৈব সার দিয়ে জমিতে চাষাবাদ শুরু হয় গ্রামে। এতে সাফল্য পেতে শুরু করেন তারা। একে-অন্যের দেখাদেখি পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে জৈব সারে চাষাবাদ পদ্ধতি।
joibo_Sar222
শুরুর কথা
গ্রামের কৃষকরা জমিতে রাসায়নিক ব্যবহার করায় ফসল নষ্ট ও উৎপাদন কমসহ নানা রকম সমস্যা শুরু হলো। পরিত্রাণ পেতে ২০১১ সালের দিকে কৃষক বাবুল হালদার (৩৯) জমিতে কেঁচো ও জৈব সারের ব্যবহার শুরু করেন। ওই বছরের মার্চ মাসে তিনি স্থানীয় একটি এনজিওতে কেঁচো সার ও  কুইক কম্পোস্ট সারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন।

সেই বছরেই তিনি বাড়িতে কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে নিজের দেড় একর জমিতে সবজি চাষ করেন। এতে আগের বছরের চেয়ে ভালো ফলন পান তিনি। উৎপাদন খরচও নেমে আসে অর্ধেকে।

বাবুলের দেখাদেখি ওই সময় একই গ্রামের আরে কয়েকজন কৃষক কেঁচোর জৈব সার তৈরি ও ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি চাষ করে ভালো সাফল্য পেতে শুরু করেন।

এরপর থেকে সিংগা গ্রামজুড়ে শুরু হয় কেঁচোর জৈব সারের মাধ্যমে সবজি চাষ। বর্তমানে জৈব সার তৈরি ও এর মাধ্যমে চাষাবাদে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ২৫০টি পরিবার।

জানতে চাইলে বাবুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।  এরপর শুরু করেন সার তৈরি।

তিনি জানান, প্রথমে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে লাল শাক,পালং শাক, টমেটো, বেগুন, বাধাকপি ও মিষ্টি কুমড়ার খেতে জৈব সার প্রয়োগ করেন। ফলনও ভালো পান।

ওই গ্রামের কৃষক কেশব রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্টের তৈরি রিংয়ের মধ্যে গোবর, সবজির উচ্ছিষ্ট, কলা গাছের খোল কেটে মিশ্রিত করে, তার মধ্যে কেঁচো দিয়ে সার তৈরির জন্য রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, একটি মাটির পাত্রে ২৫ থেকে ৩০ কেজি জৈব সার তৈরি করা হয়। এতে ২ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত কেঁচো পাওয়া যায়। অতিরিক্ত জৈব সার প্রতি কেজি ১৮ টাকা দরে এবং কেঁচো প্রতি কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কৃষকদের থেকে এসব কেঁচো কিনে নেয়।

কৃষক মনোজ হাওলাদার (৫২) জানান, বর্তমানে জৈব সার দিয়ে লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাক, বেগুন, খিরাই, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচ, করলা, আলুসহ নানা সবজির চাষ হচ্ছে গ্রামে।

joibo_sar2

এনজিও সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মঠবাড়িয়া শাখার মাঠ সংগঠক অনিমেষ বালা বাংলানিউজকে বলেন, রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি চাষে তারা সিংগা গ্রামের কৃষকদের উৎসাহিত করেন। এভাবে গ্রামের ২৫০ জন কৃষক নিজেদের তৈরি সার ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন।

তিনি জানান, তারা সিংগা গ্রাম থেকে ন্যায্যমূল্যে কেঁচো কিনে পাশের গুলিসাখালী ইউনিয়নের কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করে, কৃষকদের জৈব সার দিয়ে উৎসাহিত করেন।

গ্রামের ইউপি সদস্য রিপন হাওলাদার বলেন, আমাদের গ্রামের উৎপাদিত রাসায়নিকমুক্ত সবজির আবাদ হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। প্রতিটি কৃষক পরিবার কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করে ফসলের মাঠে ব্যবহার করছেন। এতে ফসলের উৎপাদন ব্যয় যেমন কমেছে তেমনি সবজির উৎপাদন বেড়েছে।

এসব বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষমুক্ত ফসল উপাদনের লক্ষে কৃষকেরা জৈব সার ব্যবহার করছেন। এ সার তারা জমিতে ব্যবহার করছেন, তেমনি কেঁচো বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।

সুত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে