জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, রাকিব আল হাসান: বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর। প্রতিষ্ঠার একযুগে পা দিয়েছে জবি। দীর্ঘ এ সময়ে জবিতে ভর্তি হয়েছে ১২টি ব্যাচ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছে ৬-৭ টি ব্যাচ। পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। কিন্তু নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাত্র ২৪ জন। যা ১২ বছরে খুবই কম বলেন মনে করেন অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোবিজ্ঞান বিভাগের মেধা তালিকায় থাকা ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ বিভাগে মেধা তালিকায় থাকাসহ যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের মান আমাদের থেকে খুব বেশি নয়। অজ্ঞাত কারণে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন বিভাগে জবির বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়ে। এর মধ্যে অনেকে সহকারী অধ্যাপকও হয়ে গেছেন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ১ জন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১ জন, মনোবিজ্ঞানে ১ জন, অর্থনীতিতে ১ জন, গণিতে ১জন, পদার্থ বিজ্ঞানে ২ জন, রসায়নে ১ জন, আইন বিভাগে ১ জন, ইসলামিক স্টাডিজে ১ জন, ইংরেজিতে ১ জন, সমাজ বিজ্ঞানে ৩ জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ১ জন, মার্কেটিং এ ২ জন, ফিনান্সে ২ জন, ম্যানেজমেন্টে ৩ জন,একাউন্টিং এ ১ জন সহ বেশ কিছু বিভাগে জবির শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এছাড়া বেশ কিছু পুরানো বিভাগে কোনো শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণীবিজ্ঞান,পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাস, বাংলা, ইতিহাস বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে জবি শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ জবির শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ার কারণ হিসবে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে যারা আসেন তাদের মান খারাপ থাকে। এর পেছনে কারণ হলো যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষক হয়েছেন, তারা চান না যে জবির শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হোক। আরেকটি কারণ নিয়োগে যদি কোনো আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে তবে জবির শিক্ষার্থীদের সাথে তা করতে পারবে না। এজন্য আমাদের খুবই কম নিয়োগ দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি থেকে প্রথম শিক্ষক হওয়া ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিউটন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দরকার। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে যোগ্যতায় কোনো অংশে কম নয়। আমি মনে করি এখন থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে এ কাজটি আমাদের ভিসি স্যার করছেন।’
জবির শিক্ষার্থীদের আরো কেন সব বিভাগে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে জবি ভিসি ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন। আমরা এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। এটা নির্ভর করে শিক্ষকদের মানের উপর। এখন ধীরে ধীরে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মান বাড়ছে। ভবিষ্যতে এটা আরো বাড়বে। তখন বেশি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে