জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ কতৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের একমাত্র সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। এতে মুল্যবান মেশিনপত্র ও খোলা আকাশের নিচে বিশাল ইয়ার্ডজুরে হাজার কোটি টাকার লোহার মালামাল মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৮৬৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার পাশে ১৮ একর ভুমিতে নির্মাণ করেন সেতু কারখানা সৈয়দপুর। শুরুতে এ কারখানার কর্মকান্ড পরিচালনায় মেশিন সপ, পয়েন্টস এ্যান্ড ক্রোসিং সপ ও গাডার ইয়ার্ড সপ নামে তিনটি উপকারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করত। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সকল ষ্টেশনের প্লাটফ্রম সেডের মালামাল, রেললাইনের পয়েন্ট এ্যান্ট ক্রোসিং, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলিও মটরট্রলি মেরামত ও তৈরী, মোর গার্ডার, পানির ট্যাংকি, ফুট ওভার ব্রিজের মালামাল, ট্যাং ষ্টেজিংসহ ২৫ ধরনের মালামাল তৈরী হত এ কারখানায়। থাকত সর্বদা কর্মচা ল্য মুখর। ১৯৯১ সালে খালেদা সরকার বাধ্যতামুলক গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও নিয়মিত অবসরের কারণে ১২৭ জন মঞ্জুরীকৃত পদের বিপরিতে মাত্র ৬ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে ২ জন যাবেন অবসরে যাবেন। বাকি ১ জন প্রেষনে পাকশিতে, ১ জন সহকারি সেতু প্রকৌশলী তিনিও অফিসে নিয়মিত নয়। ১ জন ষ্টোর কিপার ও ১ কর্মচারি ফাইলপত্র টানাটানি নিয়েই চলছে এ কারখানার কর্মকান্ড।

সরজমিনে দেখা যায়, এ কারখানার ৩টি উপ-কারখানার মধ্যে প্লাটফ্রম শেড বা নকশা ঘরটি তালাবদ্ধ। ভিতরে আর্বজনার স্তুপ। পাশে মেশিন শেডটির চিত্র একই। পুরো ইয়ার্ড জুরে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জঙ্গলি গাছ। পরিছন্নতার অভাবে খোলা আকাশের নিচে মাটির উপরে এঙ্গেল রড, স্কয়ার রড, কভার প্লেট, মিটার ও ব্রড গেজ লাইনের সেতুর স্পেয়ার গাডার, তিস্তা ও পাকশি হার্ডিঞ্জ সেতুর পরিত্যাক্ত লোহা-লক্কর, রেললাইন, একটি বিকল ষ্টিম ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের লোহার মালামাল বিক্ষিপ্ত ভাবে রাখায় এর ভিতর দিয়ে বেরিয়েছে জঙ্গলী গাছ। এভাবে পুরো ইয়ার্ড জুড়ে মাটির নিচে চাপা পরেছে ফ্রা প্লেট ও কভার প্লেট। যার আনুমানিক বাজার মুল্য সাড়ে ৮ শত কোটি টাকা। একই ভাবে জরাজির্ণ অফিস ঘর ও বিশাল উচ্চতার শেড অবকাঠামোর মেজেতে সারিবদ্ধ ৫টি বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার, ৩ টি ওয়েল্ডিং প্লান্ট, উইন্স ক্রাব, ৩টা ডাইচ, লেদ ২টি, বিদ্যুৎ চালিত বেল্ড ড্রাইভিং ৩ টা, ১চি প্লেট কাটিং বা শেয়ারিং মেশিন, হেমার ২ টি, প্লেনিং ২টি। পয়েন্টস এ্যান্ড ক্রোসিং শপে এক্সপাঞ্জ সুইস বা টাংরেল, ৬০ হর্সের বিদ্যুৎ সম্পন্ন বেল্ড ড্রাইভ ২ টি। গাডার ইয়ার্ডে আসানো নামে অতি মুল্যবান শেয়ারিং মেশিন, শেয়ারিং পা মেশিন, ১ ড্রিল মেশিন, উইন্স ক্রাব মেশিন, রাশিয়ান এয়ার কমপ্রেসার ও বৃহৎ এয়ার কমপ্রেসার মেশিন মিলে মোট ৩৫ টি মেশিন। এর মধ্যে ১ টি হেমার মেশিন সচল। অত্যন্ত ব্যায় বহুল এ সকল মেশিনের বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় ১ শত ৫০ কোটি টাকা। এতে প্রায় হাজার কোটি সরকারি সম্পদ মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে।
সহকারি সেতু প্রকৌশলী জুয়েল মিঞা জানান, দক্ষ জনবল সংকট, কাঁচা মালের অভাবের কারনে ৬ বছর ধরে এ সেতু কারখানায় উৎপাদন বন্ধ আছে। উর্ধ্বত্বনদের কাছে একাধিকবার সংকটের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পাশাপাশি নষ্ট মেশিন পত্র এ দেশে মেরামত সম্ভব নয় ভেবে প্রায় এ সকল মেশিন ক্রয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। তাই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

তবে দেশের একমাত্র সেতু কারখানার এ অবস্থায় হতাশা প্রকাশ করেন স্থানিয় সচেতন মহল। তাদের দাবি, ঠিকাদারদের মাধ্যমে পকেট ভারীর কারণে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বত্বনরা এ কারখানাটি ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আলম মাষ্টার বলেন, এ কারখানা নিয়ে সরকারকে ধোয়াশায় রেখেছেন রেলের কর্তারা। তারা জমজমাট বাণিজ্য করতেই সেতু কারখানাটিকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছেন। তাই এ সকল কর্তাদের অপসারণসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও কাঁচামাল সরবরাহ এবং নতুন অথবা মেশিনগুলো সচল করে পুনরায় এ কারখানায় উৎপাদন চালুসহ মালামাল রক্ষার দাবি জানান বর্তমান সরকারের কাছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে