মারুফ সরকার, বিনোদন ডেস্কঃ ছোট পর্দায় প্রিয় আর আদুরে মুখ, নাম তার কেয়া মনি। শুরুটা হয় গানের শিল্পী হিসেবে, কালক্রমে এখন দর্শকপ্রিয় অভিনয় শিল্পী। দেড় ডজন একক ও ধারাবাহিক নাটকসহ একাধিক টেলিফিল্মে কাজের সুনাম রয়েছে তার। আরও কিছু কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সে। তবে তার চিন্তা চেতনা এখন বড় পর্দার দিকে। তার সামগ্রিক অবস্থা আর ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে বিশেষ।অভিনয় জগতে পদার্পণ কীভাবে? কেয়া মনি অভিনয়ের শুরুটা অনেক ছোট থেকে।

শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করতে করতেই আজ আমি এতদূর। শুরুটা আমার গান দিয়ে। আমি গান করতাম। বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেছি। তখন থেকেই অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা সৃষ্টি হলো। একসাথে আর সব করা সম্ভব হলো না। গানটা ধীরে ধীরে বাদ দিয়ে আমি নাটক ও নৃত্যে নিয়মিত হতে শুরু করলাম। পড়াশোনার কারণে ব্যস্ত ছিলাম। ভেবে ছিলাম পড়াশোনা শেষ করে তবেই অভিনয়ের কাজ শুরু করবো। এই ব্যস্ততার ফাঁকে অভিনয়েও কিছুটা সময় দিয়েছি। এরমধ্যে থিয়েটার, নাট্যশালা, নৃত্যের ক্লাসে নিয়মিত ছিলাম।
অগ্রগতি কী?

কেয়া মনিঃ একক, ধারাবাহিক মিলিয়ে প্রায় ২০টি নাটকে কাজ করেছি। বেশ কিছু টেলিফিল্মেও কাজ করেছি। এরমধ্যে সালাউদ্দীন পরিচালিত ” মায়া মসনদ ” জুয়েল শরীফ পরিচালিত ” আশায় বসতি ” ” ‘মিয়া পরিবার ” ” বহিঃশিখা ” ” মুক্তারমালা ” ” বন্দি শিখা ” জয় সরকার পরিচালিত ” ওয়ান গার্ডেনর টু ফ্লাওয়ার ” ” ভবিষ্যৎ খারাপ ” তাজু কামরুল পরিচালিত ” সংসার ” লিটু করিম পরিচালিত ” পাত্রী যাত্রী ” এ.কে শুভ পরিচালিত ” কে ভালো “‘একটি গল্পের চরিত্র প্রেমা ” ” সৎ ছেলে ” সাজ্জাদুল ইসলাম সম্রাট পরিচালিত “‘একদিন বৃৃষ্টিতে বিকেলে ” ইফতেখার ইফতি পরিচালিত ‘ঠগের মুল্লুক’ উল্লেখযোগ্য। এখন কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত?কেয়া মনি এখন আমি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের জন্য ধারাবাহিক নাটকের কাজ করছি। যা প্রায়ই প্রচারিত হচ্ছে। গেল ঈদেও আমার বেশ কয়েকটি নাটক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। এ ছাড়াও বিটিভির নিয়মিত বেশ কিছু ধারাবাহিকের কাজ আমি করছি। অভিনয় নিয়ে পরিকল্পনা কী? কেয়া মনি যেহেতু ছোট বেলা থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত, অবশ্যই ভালো পরিকল্পনা আছে। এখনও পর্যন্ত বড় পর্দায় কোন কাজ করা হয়নি, ছোট পর্দার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। ভালো কোন গল্প পেলে ছবিতে কাজ করবো। অভিনয়ের যোগ্যতা আমার নিজের, সুযোগ পেলে আমি আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করবো।পাশাপাশি কী করা হচ্ছে? কেয়া মনি বর্তমানে আমি এমবিএ’র শিক্ষার্থী। এরআগে শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশান ডিজাইনের উপর বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেছি। পড়াশোনা শেষের দিকে। বিসিএস দেয়ার ইচ্ছে আছে। সে ক্ষেত্রে সবার দোয়া আর আর্শীবাদ কামনা করি।

এরপর কী অভিনয় ছাড়বেন?
কেয়া মনি: অভিনয় কখনও ছাড়বো না, ছাড়ার জন্যও আসিনি। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, প্রচন্ড শীতসহ সব রকম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে অভিনয়ের জন্য কাজ করেছি। অভিনয়ে যদি ভালো অবস্থানে যেতে পারি তবে আর ফিরবো না।

সিনেমায় ডাক পেলে কী সাড়া দেবেন?
কেয়া মনি: হ্যা, অবশ্যই কাজ করবো। ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে আছে। সেক্ষেত্রে গল্পটা যদি আমার পছন্দ হয় তবেই কাজ করবো। তবে সামাজিক গল্পের প্রতি আগ্রহটা আমার বেশি।

চলচ্চিত্রে ভিনদেশী আগ্রাসন প্রসঙ্গে কী বলবেন?
কেয়া মনি: বর্তমানে আমাদের সিংহ ভাগ দর্শক ভিনদেশি টিভি সিরিয়াল আর ছবিতে মত্ত। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আমাদের দেশেও অনেক কিছু আছে। এই যে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্যসহ এ দেশে দেখানোর আর দেখার মত অনেক কিছুই আছে। আসলে তার জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারিনা, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের দেশে যে পরিমাণ অভিনয় শিল্পী আছে তাদেরকে একটু গুরুত্ব দিলে বাইরের দেশের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ অনেকাংশে কমে আসবে। বুঝিয়ে দিতে হবে আমাদের দেশেও ভালো কিছু হয়।

এই দুরবস্থার মধ্যে কীভাবে কাজ করবেন?
কেয়া মনি: অবস্থা সবসময় এক থাকে না। আজ এই অবস্থা থেকে যে কোন সময় চলচ্চিত্রাঙ্গন জেগে উঠতে পারে। এখনও দর্শক আছে, ভাল অভিনেতা/অভিনেত্রী, পরিচালক আর কাজের জায়গাও আছে। কাজটা নিজের যোগ্যতার কাছে। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করাটা আমার লক্ষ্য।

ছোট বেলার শখ কী?
কেয়া মনি: ছোট থেকেই তারকা অভিনেত্রী হওয়ার শখ ছিল প্রবল। আমার বন্ধু বান্ধবরা যখন হেলায়-খেলায় সময় পার করেছে আমি তখন অভিনয়ে কাজের জন্য নিজেকে তৈরীতে ব্যস্ত থেকেছি। আমার নাচের ক্লাসে নির্দিষ্ট সময়ের একঘন্টা আগেই উপস্থিত হতাম। এ সময়ের মধ্যে আমি আমার নাচের মুদ্রাগুলো আগে আগেই কাভার দিতাম।

অবসরে কী করতে ভালো লাগে?
কেয়া মনি: অবসর সময়ে আমার কবিতা-গল্প এসব লেখার পাশাপাশি গান শুনতে ভালো লাগে।

অভিনয়ে আসার অনুপ্রেরণা কে যোগাত?
কেয়া মনি: আমার মমতাময়ী মা। তিনিই আমাকে অভিনয়ে আসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন, আমার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। শত বাঁধা বিপত্তির পরেও আমার মায়ের জন্য আমি পিছু পা হয়নি। আর আমার সব সময় মনে হয়- চেষ্টা করলে সম্ভব। আজ জনপ্রিয়তা না থাকাই সে সুযোগটা পাচ্ছি না। আমার বিশ্বাস, একটা সময় আমার যোগ্যতার কারণে অবশ্যই ভালো অবস্থানে পৌছুতে পারবো। সকলের দোয়া আর সহযোগিতা চাই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে