ডেস্ক স্পোর্টসঃ টি-টোয়েন্টি চার-ছক্কার খেলা? লোকে তো তা-ই বলে। কাল চার-ছক্কা থেকে বাংলাদেশ নিয়েছে ৯৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছে ৮৮ রান। তাহলে? বাউন্ডারিতে ১০ রান বেশি নিয়েও ২০ রানে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। কারণ? রান মানে হলো দৌড়, ক্রিকেট রানের খেলা মানে দৌড়ের খেলা। আর বাংলাদেশ এই সিঙ্গেলগুলোই বের করতে পারে না। একাধিক ডট বল সর্বনাশ ডেকে আনে। কালকের ম্যাচের গল্পটাও একই রকম।
বেশি চার-ছক্কা মেরেও লাভের খাতায় যোগফল শূন্য। এই হারের কাটাছেঁড়া করতে গেলে হয়তো অনেক কারণই উঠে আসবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে ‘ডট বল’! টানা কয়েকটি ডট বল ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। ব্যাটসম্যান ঝুঁকি নিতে চান। উড়িয়ে মারতে চান, ডাউন দ্য উইকেটে আসেন, যে শট না খেললেও হতো, সেই শট খেলেন…কি, কাল সাব্বিরদের আউট হওয়ার ধরনগুলো চোখে ভাসছে তো?
অথচ, দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড় থেকেই শিক্ষা নিতে পারত বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান এ বি ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড মিলাররা এই দলে খেলেন। চার-ছক্কা মারতেই তাঁরা ভালোবাসেন। তবু দক্ষিণ আফ্রিকার রানের বণ্টন দেখুন। ৪টি ছক্কা, ১৬ বাউন্ডারি মিলিয়ে মোট ৮৮ রান। ‘মি. এক্সট্রা’ থেকে যোগ করুন আরও ১০ রান। ইনিংসের বাকি ৯৭ রান তাঁরা ‌চুরি করেছেন সিঙ্গেলস-ডাবলস থেকে, টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই যা রেকর্ড!
এই রানের পাহাড় দাঁড় করাতে গিয়ে প্রোটিয়াদের ছাড় দিতে হয়েছে ২২টি ‘ডট বল’। তার জবাবে বাংলাদেশে হেঁটেছে সেই পুরোনো পথে—সামনে রানের পাহাড় মানেই কচুকাটা করো! কিন্তু অলক্ষ্যে কোপটা পড়েছে নিজেদের পায়েই। পরিসংখ্যান বলছে, চার-ছক্কা ও অতিরিক্ত খাত থেকে প্রোটিয়াদের চেয়ে বেশি রান নিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। ৭ ছক্কা থেকে এসেছে মোট ৪২ রান। ১৪ বাউন্ডারি থেকে আরও ৫৬ এবং ‘মি. এক্সট্রা’ থেকে ১৪। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ১১২। সিঙ্গেলস-ডাবলস থেকে এসেছে মাত্র ৬৩!
সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কথা হলো, বড় সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে স্ট্রাইক অদল-বদলের ‘বেসিক’ ভুলে গেছে বাংলাদেশ। মানে, বলে-বলে সিঙ্গেলস নিয়ে চাপ কমানোর কৌশলটা অন্তত প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা দেখা যায়নি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। তা না হলে, হারের সঙ্গে একটি-দুটি নয়, ৪৫টি ‘ডট বল’-এর কলঙ্ক লেগে থাকত না। ২০ ওভারের খেলায় সাড়ে সাত ওভার তো রানই তুলতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা!
হারের পর অধিনায়ক সাকিব কিন্তু এ কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন ব্যাটসম্যানদের, ‘বেশ কিছু জায়গায় উন্নতি করতে হবে। ডট বল সমস্যা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। এটা ভুগিয়েছে। আক্রমণের সঙ্গে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের দরকার ছিল।’
টি-টোয়েন্টিতে ‘ডট বল’ দেওয়ার খেসারত কতটা মারাত্মক, সেটি নতুন করে বলার কিছু নেই। যেমন ধরুন, ৪৫টি ‘ডট বল’-এর মধ্যে থেকে বাংলাদেশ যদি এক এক করে এর অর্ধেক রানও নিতে পারত, তাহলে কিন্তু ম্যাচটা জেতা হতো। এ ম্যাচে যেহেতু তা সম্ভব হয়নি, সৌম্য সরকার তাই ভুল শুধরে নিতে চান পরের ম্যাচে, ‘ডট বল টি-টোয়েন্টিতে অনেক বড় জিনিস। আমরা যখন বোলিং-ফিল্ডিং করেছি, তখন যদি কিছু রান কম দিতাম যেমন—রুবেল ভাইয়ের নো বলে ওয়াইড, ফিল্ডিংয়ে কিছু মিস হয়েছে। ওই রানগুলো আটকাতে পারলে ওদের স্কোর হয়তো ১৭০-এর মতো থাকত। পরের ম্যাচে ডট বল যদি কম দিতে পারি স্কোরটা আরও বড় হবে।’

P/A/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে