পূর্ণ জীবন

…………….রফিকুল ইসলাম প্রিন্স

কিবরিয়া মুহাম্মদ হানিফ এই এলাকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
অর্থ বিত্তে মোড়ানো তার চারপাশ।
ইদানিং তার সক্ষতা গড়ে উঠেছে এলাকার মসজিদের ইমামের সঙ্গে।
আগে খুব একটা নামাজের কাতারে তাকে দেখেনি কেউ।
এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সাথে আলাদা বেশ খানিকটা সময় মসজিদে নফল এবাদতে কাটায়।
এর সমস্ত কিছু সম্ভব হয়েছে ইমাম সাহেবের বদৌলতে।
তিনি তার নমনীয় আচরণ এবং ইসলামকে সঠিক ও সহজ ভাবে তুলে ধরেছেন কিবরিয়া সাহেবের কাছে।
যার দরুন মানুষটা বুঝতে পেরেছে ইসলামের গুরুত্ব এবং নীতি।
ইমাম সাহেবের কথার প্রেক্ষিতে কিবরিয়া মুহাম্মদ হানিফ বললো- ‘কুরবানির আর মাত্র দুই দিন বাকি।
এবছর হজ্জ্বটা আর করা হলো না হুজুর।’ ‘ইনশাআল্লাহ কুরবানি হালাল শরিয়তে দিন ভাইজান।
আল্লাহ্ আপনাকে তৌফিক দান করবে হজ্জ্ব করার।’
‘হালাল শরিয়ত!’ ‘ ভাই ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরব’ থেকে আগত।
এটি একটি মূল ধাতু, যার সঠিক অর্থ নৈকট্য।
সুতরাং এক আল্লাহ্র নৈকট্য পাওয়ার জন্যই আমাদের এই এবাদত।
তাই এটি শতভাগ শরীয়তসম্পন্ন হওয়া ফরজ।’
‘কিন্তু এর আগে তো বোধহয় আমি তা করি নি।’
‘আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ্।
তিনি পরম দয়ালু।
আপনার সঠিক পথে ফিরে আসা তিনি কবুল করবে।’
‘হুজুর সাহেব, এই মাসের জন্য তো নিশ্চয়ই কিছু আমল আছে।’
‘নিশ্চয়ই আছে।
এটা হজ্জ্ব ও কুরবানির মাস।
আমাদের মন মগজ বাইতুল্লাহর দিকে উদ্বেলুত হওয়া জরুরি।’
কিবরিয়া সাহেব কিছুক্ষন নীরব থেকে বললো- ‘হজ্জ্ব করার শখ আছে।
কিন্তু আমি এই বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না।
আপনি আমায় হজ্জ্বের শুরু থেকে শেষ অবধি একটু বুঝিয়ে দিন হুজুর সাহেব।’
‘মাশাআল্লাহ্ ভাই আমার! আপনি ইসলামকে বুঝতে চাইছেন আর আমি বুঝাবো না তা হয় না।
হজ্জ্বের শুরুর ধাপটা হলো ইহরাম।
ইহরামের আলাদা নিয়ম এবং তালবিয়া রয়েছে।
যা পাঠের মাধ্যমেই ইহরাম শুরু হয়।’
কিবরিয়া সাহেব মনদিয়ে কথাগুলো শুনছে।
কতার মাঝে প্রশ্ন করলো- ‘আচ্ছা হুজুর, তালবিয়া কী?’
ইমাম সাহেব তাকে সহজ ভাষায় তালবিয়ার মর্ম বোঝাতে গিয়ে বললো-
‘ভাই তালবিয়া হলো সেই জিনিস,
যাতে ঈমান,তাওহীদ,
ইহসান, শোকর, তাফবীয, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব কিছু বিদ্যমান।’
‘হুজুর সাহেব, তাফবীয আর ইহসান সম্পর্কে যদি একটু খোলাসা করে বলতেন তবে সুবিধা হতো বুঝতে।’
‘তাফবীয ও ইহসান হলো সেই পর্যায় যা ইমানের সর্বশ্রেষ্ঠ নীতি।
নিজেকে, নিজের যাবতীয় বিষয়গুলোকে এক আল্লাহর হাওয়ালা করে দিতে হবে।
সবসময় এমন অনুভূতি আগলে জীবনযাপন করতে হবে যে, আমি আল্লাহর বান্দা।
আমি তার সামনে সবসময় উপস্থিত।
তালবিয়ার মর্মমূলই হলো এটা।
আমাদের সকলকে এই পর্যায়ে উপনীত হতে হবে।
হাজী, ইমাম কিংবা সাহেবানদের নয়, বরং ইমানের এই চেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রতিটা মানুষের কর্তব্য।’
কিবরিয়া সাহেব ইমাম সাহেবের হাত ধরে মুসাফা করে বলে-
‘আপনি আমায় যা শিখান তা কোটি টাকা দিয়েও আয়ত্ত করা সম্ভব নয় হুজুর।
আমার অহংকার আপনি ধুলায় মিশিয়ে আমাকে একজন আল্লাহ্র বান্দা হতে সবসময় চেষ্টা করে গেছেন।
আমিও আপনার আদেশ মান্য করে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে জীবনধারন করে বাঁচতে চাই।’
ইমাম সাহেব এক যুদ্ধ বিজয়ের খুশি মুখে রেখে বলে- ‘আলহামদুলিল্লাহ!’
কিবরিয়া সাহেব কুরবানির বিষয়ে এখনো পরিপূর্ণ জ্ঞান না পেয়ে ফের প্রশ্ন করে-
‘হুজুর, শরিয়ত সম্মত কুরবানি আমি করতে পারবো তো এবার?’
‘আল্লাহ্ তৌফিক দান করুণ।
ভাই, সূরা আনআমে কিছু কথা এমন যে-
قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ *
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ *
لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থাৎ, ‘আপনি বলে দিন,
আমার প্রতিপালক আমাকে পরিচালিত করেছেন সরল পথের দিকে,
এক বিশুদ্ধ দ্বীনের দিকে। অর্থাৎ একনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত,
আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
আপনি বলুন, নিঃসন্দেহে আমার সালাত,
আমার নুসুক এবং আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু,
সমস্ত জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।
তাঁর কোন শরীক নেই।
আর ওই বিষয়েই আমাকে আদেশ করা হয়েছে।
সুতরাং আমি হলাম আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম।’
আল্লাহ্ হযরত ইবরাহীম (আ.)কে যেমন খালেছ তাওহীদ
ও সিরাতে মুস্তাকীমের প্রত্যাদেশ করেছিলেন,
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের প্রতিও একই খালেছ তাওহীদ এবং সিরাতে মুস্তাকীমের প্রত্যাদেশ নাযিল করেছেন।
তাঁকে আদেশ করেছেন যে- ‘বল, আমার নামায,
আমার কুরবানী, আমার জীবন,
আমার মরণ সহ যাবতীয় সব আল্লাহর জন্য।’
কিবরিয়া সাহেব ছলছল চোখে হুজুরের সাথে সাথে উচ্চ কন্ঠে বলেন-
‘আমার নামায, আমার দ্বীন,
আমার জীবন, আমার কুরবানী এবং মৃত্যু সহ সকল বিষয় এক আল্লাহর জন্য।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে