ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকার নবাবগঞ্জে একটি হোটেলে অবস্থানরত যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর সোমবার রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সংবাদকর্মীরা।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য খায়রুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, রাজু আহমেদ ও সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন-ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। মানববন্ধন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মামুনুর রশীদ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে হামলা, দমন, নিপীড়ন চলছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সাংবাদিক নেতারা।

হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে যেন আর কোনো সাংবাদিক হামলার শিকার না হন এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তার দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।

গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দোহার উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই ন্যাক্কারজনক হামলায় অংশগ্রহণকারী আসামীদের মধ্যে রয়েছেন- ১) দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো: আলমগীর হোসেন (৫০), থানা – দোহার, জেলা -ঢাকা ২) নবাবগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম (৪৫), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৩) সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মো: পলাশ (৩৮), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৪) মুরাদ শিকদার, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৫) খৈমুন্দিন , থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা।

৬) মুরাদ হোসেন, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৭) অনুপ দত্ত নিপু, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৮) মুখলেছুর রহমান, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ৯) শহিদুল ইসলাম সেন্টু, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১০) সিয়াম, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১১) মো: শহিদুল, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১২) ওয়াশিম ওরফে আজিজ মন্ডল, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা ১৩) মুজিবুর দেওয়ান, থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা।

১৪) আবদুল জলিল ব্যাপারিসহ (চুড়াইন ইউপি চেয়ারম্যান), থানা – নবাবগঞ্জ, জেলা -ঢাকা অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জন অবৈধভাবে অনাধিকার প্রবেশ করে হত্যা ও জখমের উদ্দেশে ১ নং আসামীর হুকুমে অন্যান্য আসামীগণ অতর্কিতভাবে তাদের হাতে থাকা রিভলভার, ডেগার, রাম দা, চাপাতি, হকিস্টিক, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা করে।

উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকার নবাবগঞ্জে একটি হোটেলে অবস্থানরত যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। এতে কমপক্ষে ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

সোমবার রাত ১১টার দিকে নবাবগঞ্জে থানা রোডে শামীম গেস্ট হাউসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় ১৮টি গাড়ি ও হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই হোটেলে অবস্থান করছিলেন সাংবাদিকরা। সশস্ত্র হামলাকারীরা প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখে গণমাধ্যমকর্মীদের। এ সময় স্থানীয় থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এমনকি ন্যক্কারজনক এ ঘটনা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে থানা বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ খোঁজ নেননি। অথচ থানার কাছেই এ গেস্ট হাউস অবস্থিত।

এর পর মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকালে শামীম গেস্ট হাউসে অবস্থানরত সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার জন্য হঠাৎ পুলিশের একটি দল এসে হোটেল মালিককে হুমকি দেয়।

হোটেল মালিক জানান, হঠাৎ করে পুলিশ এসে জানায় হোটেলে অবস্থানরত যেসব সাংবাদিক আছে, তাদের ২০ মিনিটের মধ্যে হোটেল ছেড়ে যেতে হবে। অন্যথায় পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এর পর আমি সাংবাদিকদের এ বিষয়টি অবহিত করি।

ওই হোটেলে অবস্থানরত যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মুজিব মাসুদ (মামলার বাদী) জানান, আমরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের হোটেল থেকে ফোন দেয়। তারা জানায়, আপনারা যেখানেই থাকেন তাড়াতাড়ি আসেন, ২০ মিনিটের মধ্যে হোটেল ত্যাগ করতে হবে।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা জানান, হোটেল থেকে সাংবাদিকদের বের করে দিতে থানার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তোফাজ্জল হোসেন ও নবাবগঞ্জ থানার ওসি চাপ প্রয়োগ করে হোটেল কর্তৃপক্ষকে। সাংবাদিকদের বের না করলে পরিণাম খারাপ হবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই হোটেল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের বের করে দেয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি নিশ্চিত করতেই সাংবাদিকদের বের করে দেয়া হয়েছে। তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

J/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে