জুয়েল ইসলাম, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের তারাগঞ্জের হাট-বাজার গুলোয় চলছে খড় বিক্রির রমরমা ব্যবসা। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায়, গত মৌসুমে বোরো খড় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ায় কৃষক ও খামারিরা বিকল্প হিসেবে ঝুঁকে পড়েছেন আমনের খড়ে। গো-খাদ্য হিসেবে কাঁচা খড়ের চাহিদা এখন অনেক। এ কারণে আগাম জাতের আমন ধান কেটে কৃষকেরা দ্রুত ধান ছাড়িয়ে কাঁচা খড় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। খড় বিক্রি করেই উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ছোট- বড় মিলে প্রায় ১০৫টি গরুর খামার রয়েছে। এছাড়াও গৃহপালিত প্রায় ৭০ হাজার গরু কৃষকদের ঘরে আছে। এসব পশুকে চার মাস বোরো ধানের খড় ও আট মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়।

বোরোর মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধানের খড় কৃষকেরা শুকাতে পারেনি। ফলে পচে গেছে খড়। এছাড়াও আগের মতো বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠ নেই। এ কারণে দেখা দিয়েছে ঘাস সংকট। মাঠে ফসল লাগানোর আগেই এখন একধরনের কীটনাশক স্প্রে করে আগাছা বা ঘাসের জন্ম প্রতিরোধ করা হয়। এ অবস্থায় আগাম জাতের আমন ধানের কাঁচা খড়ের চাহিদা বেড়েছে। প্রতি আঁটি ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমন ধানের শুকানো খড় কিনতে গুনছে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। পাইকারেরা কৃষকদের বাড়ি থেকে এ খড় কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন।
বালাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, “ভূসি, ফিডের দাম বাড়ছে। বোরোর খড়ও শেষ। মাঠ-ঘাটে ঘাস নেই। এবার বাজারোত কাঁচা খড়ের খুব চাহিদা। বাজারোত খড় নিয়া গেইলে মানুষ হুমড়ি খেয়া পড়ে। চোখের পলকে ধানের কাঁচা আঁটি বেচা হয়া যায়। একটা কাঁচা খড়ের আঁটি ৮ টাকায় বেচা হয়।”

ঘনিরামপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “৫০ শতক জমিত এবার আগাম জাতের ধান নাগাছনু। ধান হইছে ৩০ মণ (২৮ কেজি)। আর কাঁচা আঁটি পাছুন এক হাজার দুইশ টা। প্রতি আঁটি বাড়িত ৬ টাকা করি পাইকারেরটে বেচে পাছুন ৭ হাজার ২০০ টাকা। মোর ৫০ শতক জমির ধান চাষ করতে খরচ হইছে ৭ হাজার টাকা। কাঁচা খড় বেচে এবার আবাদের টাকা উঠোছে।”

নারায়ণজন গ্রামের আরেক কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, “এবার ধানেরও বাজার ভালো, খড়েরও বাজার ভাল। কৃষকেরা ফসলের এরকম ন্যায্য দাম পেলে কখনও কষ্টে থাকবে না। দেশ থেকে অভাব দূর হয়ে যাবে।”

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড়ে খড় কেনার সময় কথা হয় রহিমাপুর গ্রামের সুমন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “খড় হচ্ছে গরুর প্রধান খাদ্য। বোরো ধানের খড় গরুকে খাওয়ানো শেষ। নিজের খেতের ধান উঠতে এ্যালাও অনেক সময় নাগবে। গরু-বাছুর নিয়া খুব বিপদে আছি। প্রতিদিন বাজার থাকি ৮ টাকা দামে কাঁচা খড়ের আঁটি কিনি গরুক খিলাওছি।”

সোমবার তারাগঞ্জ বাজারে কথা হয় কাঁচা খড় কিনতে আসা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খামারি এমদাদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার ৫টি গরুর একটি খামার আছে। গো-খাদ্য, খড়ের বাজার খুব চড়া। কাঁচা খড়ের আঁটি বেশি দামে কিনে পোষাচ্ছে না। গরু-বাছুর নিয়া খুব যন্ত্রণায় আছি। না পারছি বেচতে, না পারছি গরুগুলোকে ঠিকমত খাবার দিতে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিনা ৭, ১৬, ১৭ ও ব্রি-ধান ৭৫ চাষ হয়েছে। এ ধান ১০০-১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকেরা। আর মূল আমন ধান উঠতে সময় লাগে ১৫৫-১৬০ দিন। আমন উঠতে আরও সময় লাগবে। এ সময় ঘাস ও খড়ের সংকট থাকে। তাই গো-খাদ্য হিসেবে আগাম জাতের ওই ধানের কাঁচা আঁটির চাহিদা বেড়েছে। এতে খড় বিক্রি করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে