খলনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ঘটনাচক্রে নায়ক হয়ে গেলেন। নায়ক হয়ে ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সেরা সফল একজন অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। মৃত্যৃর ২৪ বছর পরও তাই তাকে নিয়ে আলোচনা হয়। ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে দেখা হয় তার সিনেমা ও গান।

বলছি চিত্রনায়ক জসীমের কথা। আজ ১৪ আগস্ট তার জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এই দিনে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জসীম। তার আসল নাম আবদুল খায়ের জসীম উদ্দিন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন জসীম। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই নাম লেখান সিনেমায়।

অনেকেই কৌতুক করে বলেন, ‘ভুঁড়িওয়ালা জসীম!’ এমন ভূঁড়ি নিয়েও যে সুপারহিট নায়ক হওয়া যায় জসীম সেটা প্রমাণ করে গেছেন। দর্শক তার বৈচিত্রময় অভিনয়ে মুগ্ধ হতেন।

তার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ছিলো দর্শকের বিশেষ পছন্দ। বলা হয়ে থাকে এদেশের সিনেমার অ্যাকশনে নতুন মাত্রা এনেছিলেন তিনি। প্রায় প্রতি সিনেমাতেই তিনি ইউনিক কিছু অ্যাকশন দৃশ্য নিয়ে হাজির হতেন। যা নিয়ে আলোচনা চলে আজও।

জসীম ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা কিন্তু এই জসীমের হাত ধরেই। আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন জসীমের ছাত্র।

জসীম অভিনয় শুরু করেন ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে জসীম প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও ছিল তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপের করা।

তবে সিনেমায় জসীমের রাজকীয় উত্থানের কথা বলতে গিয়ে দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’-কে উল্লেখ করা হয়। ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম ‘শোলে’ ছবির রিমেক। ছবিতে জসীম গব্বারের চরিত্র অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।

এ সিনেমার কয়েক বছর পর সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন জসীম। এটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি তিনি। সিনেমার পর্দায় জসীম ক্রমেই নিজেকে শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিলেন। তার সিনেমা মানেই ব্লকবাস্টার হিট।

জসীম তার সময়ের প্রায় সব জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। তবে শাবানা ও রোজিনার সঙ্গে তার জুটি ছিলো সবচেয়ে সফল। মজার ব্যাপার হলো শাবানার প্রেমিক ও স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা জসীম ভাই হিসেবেও অভিনয় করে সফল হয়েছেন। ‘অবদান’ ও ‘মাস্তান রাজার’ মতন ছবিতে জসীমের বড় বোনের চরিত্রে ছিলেন শাবানা।

জসীম ছাড়া শাবানার সঙ্গে এমন অভিজ্ঞতা আছে শুধু ইলিয়াস কাঞ্চনেরই।

ক্যারিয়ারজুড়ে জসীম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।

ব্যক্তি জীবনে জসীম প্রথম বিয়ে করেন নায়িকা সুচরিতাকে। সেই সংসার টিকেনি। পরে ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন জসীম। সেই সংসারে তিনি ছিলেন তিন পুত্রের জনক। জসীমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল, সামি।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে