ডেস্ক রিপোর্ট : মাত্র ১৪ বছর বয়সে ঢাকাই ছবিতে পথচলা শুরু তার। প্রায় ত্রিশটিরও বেশি ছবিতে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। নব্বইটির মতো বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। অবসর ছিল না বললে এতটুকুও বাড়িয়ে বলা হবে না।

সেই কেয়া একেবারে হারিয়ে গেলেন। আবার ফিরে এলেন, বিতর্কে জড়ালেন, আবার হারিয়ে গেলেন। অবশেষে সম্প্রতি আবারও সামনে এলেন।

এই লুকোচুরি খেলায় এবার থিতু হবে কিনা সেই প্রশ্ন তোলা থাকল। কিন্তু ফিরে এসেছেন বড্ড অবেলায়! এখন ঢাকাই ছবির বাজারে ক্রেতার আকাল! পারবেন তো টিকে থাকতে? অফুরন্ত গ্ল্যামার থাকতে যে মেয়েটি গায়ে ধুলো মেখে নিজেকে অচেনা করে ফেলল তাকে আবারও ঢাকাই ছবির দর্শক কতটা চিনবে সেই প্রশ্ন এখন সামনে। বিস্তারিত লিখেছেন –

মনতাজুর রহমান আকবর একজন জাত পরিচালক। তিনি শিল্পী চিনতেন। যেমন চিনেছিলেন কেয়াকে। চৌদ্দ বছর বয়সের এক উচ্ছল তরুণী। হ্যাঁ, তরুণীই বটে। কারণ ওই বয়সে কৈশোরের ছিটেফোঁটাও ছিল না তার মধ্যে।

তাই অসম্ভব গ্ল্যামারার্স এক নায়িকাকে দর্শকদের তথা ঢাকাই ছবির রঙিন দুনিয়ায় রাস্তা চিনিয়ে দিতে ভুল করেননি এই পরিচালক। ‘কঠিন বাস্তব’ ছবির মধ্য দিয়ে মনতাজুর রহমান আকবর এই কেয়াকে আসলে ছবির দুনিয়ার পিচ্ছিল পথের বিষয়টি বাস্তবে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি সফলও হন।

ওই ছবিতে চিত্রনায়ক আমিন খান ও রিয়াজকে নিয়ে কেয়ার শেষ হাসিটাও ছিল দেখার মতো। ছবির সফলতার পাশাপাশি কেয়ার অভিনয়শৈলী দেখে ঢাকাই ছবির বিজ্ঞরা বলেছিলেন মেয়েটি অনেক দূর যাবেন। গিয়েছেনও। কিন্তু তারপর?

তারপর কেয়ার সামনে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি। অনেকদূর গিয়ে হয়তো হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। হয়তো পারছিলেন না। তাই কিছুটা অনৈতিকতায় মেতে উঠার রসালো খবরও তাকে হজম করতে হয়েছে।

তার কতকটা সত্যি, আবার কতকটা গুজব। এই সত্যি আর গুজবের টানাপোড়েনে ততদিনে প্রায় ত্রিশটি ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেন কেয়া। এরপর হারিয়ে যাওয়ার পালা। প্রেম, বিয়ে কিংবা অভিনয়- এ তিনটি বিষয় একসঙ্গে হয়তো চলতে পারে না। কোথাও না, না বাংলাদেশে, না বিশ্বের অন্য কোথাও। জোর করে চালিয়ে নিয়ে গেলেও থামতেই হবে এক সময়। কেয়াও থেমেছিলেন।

কিন্তু ততদিনে সময় তার নিষ্ঠুরতার শতভাগ উজাড় করে দিয়েছে। এ সময়ের নিষ্ঠুরতার কাছে হেরে গেলেন কেয়া। আমেরিকা প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সিনেমা তথা মিডিয়া এবং বাংলাদেশকে গুডবাই জানিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র দুবছর ছিল সেই গুডবাইয়ের বয়স। ফিরতে হয়েছে তাকে। কিন্তু শূন্য হাতে। ততদিনে বদলে গেছে ইন্ডাস্ট্রি। অন্য কেউ জায়গা দখল করে নিয়েছে।

ফিরতি যাত্রায় কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। চিত্রপরিচালক সাফিউদ্দিন সাফি সেই সুযোগও করে দিয়েছিলেন।

এই পরিচালকের ‘ব্ল্যাকমানি’ নামে একটি ছবি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই চেষ্টা চার বছর আগেই বিফলে গিয়েছে। ব্যর্থতার বোঝা যখন একবার কাঁধে ভর করে তখন তাকে দূরে সরিয়ে রাখা দায়। তারপরও কেয়া চেষ্টা করেছেন। বছর দুই আগে ‘শিরোনামে তুমি’ নামে একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছবি ঘোষণাতেই বন্দি।

কেয়ার আর ঘুরে দাঁড়ানো হল না। অবশ্য এর মধ্যে বছরখানেক আগে ঈদে একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোট পর্দায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেটাও থেমে গেছে। কিন্তু কেন? বলছিলেন সে কথাই।

‘আমি সবসময় চেয়েছি ভালো কিছু করি। শুরুতে সেভাবেই চলছিলাম। কিন্তু এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পলিটিক্সের কথা তো সবারই জানা। বয়সে ছোট ছিলাম। সবকিছু বুঝতেও পারিনি। বোঝার আগেই ছিটকে পড়লাম। এর কতকটা আমার ভুলে, আবার কতকটা ইন্ডাস্ট্রির নোংরা পলিটিক্স। যেন সরিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে।

আরে আমারও তো বাঁচতে হবে। শুধু অভিযোগ দিলেই তো হবে না। কী-ই বা করার ছিল? ভুলের মাশুল তো দিলাম। ফিরেও এলাম। তখন কী হল? আসলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি চাইলেও ভালো থাকতে পারবেন না। চাইলেও কাজ করতে পারবেন না। আপনাকে ভুলের মাশুল সবসময়ই দিতে হবে’- এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে কেয়া যেন হাঁপিয়েই ওঠেন। কিছুটা দম নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আমি তো নায়িকা।

আমাকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়েছিল। চলেছি বলেই আজ এ পরিণতি। মাঝে ফিরতে চাইলাম। চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। কিন্তু কপাল মন্দ। ছবির বাজারটাই ভালো নয়। তাই হয়তো সেভাবে কামব্যাক করা হয়নি। তাই আবারও চেষ্টা করছি।’

কিন্তু সময় তো এখন আপনার কিংবা ইন্ডাস্ট্রির কারোই অনুকূলে নেই। এই মন্দার বাজারে নতুন পথচলাটা কতটা মসৃণ হবে, কিংবা আদৌ হবে কিনা সেটা জেনে বুঝেই নেমেছেন? এমন প্রশ্নে কিছুটা ভাবান্তর দেখা গেল কেয়ার মধ্যে। বললেন- ‘আমাকে কাজ করতেই হবে। সময় অনুকূলে নয় আমি জানি। কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কী? তাছাড়া মা অসুস্থ। খুব বেশি। তাই আমাকে কাজ করতেই হবে।’ বলতে বলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন।

কেয়ার সঙ্গে কথা হচ্ছিল রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে বসে। নির্ধারিত সময়ের আগেই এসেছেন। হয়তো এটার প্রমাণ দিতে, আমি আর আগের হারিয়ে যাওয়া কেয়া নই। এখন সময়ের মূল্য দিতে জানি আমি।

কথা প্রসঙ্গেই পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানিয়েছেন। এরই মধ্যে হারিয়েছেন বাবাকে। মা অসুস্থ। দুটো কিডনিই নষ্ট। প্রতি সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। মাকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকতে হয় হাসপাতালে। তবুও আবার কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

নিজের জন্য না হোক, মাকে বাঁচানোর জন্য হলেও তাকে শক্ত হতে হবে। কাজ করতে হবে। শাড়ি পরে এসেছিলেন। বলতে বলতে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন। কিন্তু লেপ্টে যাওয়া কাজলের ফাঁক গলে এক ফোঁটা অশ্রু ঠিকই গড়িয়ে পড়ল।

কেয়া আবারও ফিরেছেন। ছবি দিয়েই নতুনভাবে পথ চলতে চাইছেন। নাম ‘ইয়েস ম্যাডাম’। এতে নারী পুলিশের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সিনেমার জগতেই ফিরে আসতে হল। কেমন লাগছে নতুন ফেরায়? বললেন, ‘সিনেমার মানুষ আমি। বলা চলে কৈশোর থেকেই সিনেমার সঙ্গে আছি।

নানা সংকটে সিনেমা করা হয়নি অনেকদিন। খুব মিস করেছি। ভালো লাগছে আবারও নিজের প্রিয় কাজের জায়গায় ফিরতে পেরে।’ চলতি মাসেই ছবিটির শুটিং শুরু হবে। এটি পরিচালনা করছেন রকিবুল আলম রকিব। তবে নায়ক হিসেবে কে থাকছেন সেটা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। সে যেই হোক, কেয়া ফিরতে চাইছেন, সাড়ম্বরে, আপন গণ্ডিতে।

J/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে