মাফি মহিউদ্দিন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষক বদলীতে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের অভিযোগ সরকারী নীতিমালা অমান্য করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিয়ে এবং প্রধান শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে সংশিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসারগন জোর করে প্রধান শিক্ষকদের প্রত্যায়ন নিয়ে শিক্ষক বদলী করার কারণে বিদ্যালয় গুলোতো পাঠদানে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে।
নিতাই ডাংগাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনজের আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রী ২ শত ৩৭ জন, শিক্ষকের পদ ৫ টি। এর মধ্যে একজন শিক্ষক নীলফামারীতে প্রাইমারী টিচার ইনস্টিটিউট (পিটিআই) করছেন। বাকী ৪ জন শিক্ষকের মধ্যে সহকারী শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ রায় সহকারী শিক্ষা অফিসার নুরুজ্জামান স্যারের সাথে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে রফাদফা করে বদলীর সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। নীতিমালা অনুযায়ী ওই শিক্ষকের বদলী না হওয়ায় সহকারী শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিয়ে বাড়ি মধুপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে যান। আমার স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে আমি ওই শিক্ষককে ছাড়তে রাজী না হওয়ায় সহকারী শিক্ষা অফিসার নুরুজ্জামান স্যার জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ওই শিক্ষকের বদলীর প্রত্যায়ন নেন। বর্তমানে সহকারী শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বদলী হয়ে যাওয়ায় আমার বিদ্যালয়ে আমি সহ মাত্র তিনজন শিক্ষক কর্মরত আছি। বিদ্যালয়ের কাজে মাঝে মধ্যে আমি অফিসে যাওয়ায় মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টি। ফলে দুইজন শিক্ষক দিয়ে ২ শত ৩৭ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে বিঘ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে।
গত রবিবার দুপুর ১২ টার দিকে মন্থনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে মোট দুইজন সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ও আনিছা আক্তার রুনিফা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিচ্ছেন। এসময় প্রধান শিক্ষক হাবিব মোঃ হাসিমুজ্জামানকে স্কুলে পাওয়া যায়নি। এসময় প্রধান হাসিমুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই আমি একটু অফিসের কাজে এসেছিলাম আপনারা বসেন আমি আসছি। ৩০ মিনিট পর প্রধান শিক্ষক হাসিমুজ্জামান স্কুলে এসে সাংবাদিকদের জানান, ভাই আমার বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১১৪ জন। এর মধ্যে মিজানুর রহমান নামে এক সহকারী শিক্ষক গত ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ থেকে অদ্যবদী স্কুলে আসেননা। আর একজন সহকারী শিক্ষক মনি আক্তার অন্যত্র বদলী হয়েছেন। ফলে আমি বাদে মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, নীতিমালা অনুসরন না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ নিয়ে কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কালিকাপুর শালডাংগা মাঝাপাড়া সঃ প্রাঃ বি, পুটিমারী ১ নম্বর সঃ প্রাঃ বি, উত্তর ভেড়ভেড়ী কামাল উদ্দিন সঃ প্রাঃ বি, চাঁদখানা নগরবন সঃ প্রাঃ বি, পূর্ব দলিরাম উত্তরপাড়া সঃ প্রাঃ বি , মাগুড়া এম আলী সঃ প্রাঃ বি সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে নিজের পছন্দের জায়গায় প্রতিস্থাপক, আন্তবিদ্যালয়, আন্ত-উপজেলা ও আন্তজেলা কোটায় চলতি বছরে মোট ৬০ জন শিক্ষককে বদলী করা হয়েছে।
নিতাই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার নুরুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা কোন অভিযোগ সঠিক নয়। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জোর করে প্রত্যায়ন নেয়া হয়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে ওই শিক্ষককে বদলী করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফা আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মন্থনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান কোন কারন ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক বদলীর ক্ষেত্রে সব ফাইল আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। যদি কোন সহকারী শিক্ষা অফিসার বদলীর ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করে থাকে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে