মাফি মহিউদ্দিন কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের নামে বরাদ্দের এক কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে দায়সারা কাজ করে ভ’য়া বিল ভাউচার তৈরী করে বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা উত্তোলন করে আতœসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজ বাস্তবায়নের তদারকি কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক এবং ব্যাবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে এ টাকা আতসাৎ করা হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় (পিইডিপি৪) প্রকল্প থেকে বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান) প্রকল্পে ১৪৭ টি বিদ্যালয়ে ৮০ লাখ ৫০ হাজার । চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ২০ টি বিদ্যালয়ে মাইনর মেরামত বাবদ ৪০ লাখ । রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ প্রথম পর্যায়ে ৩৩ টি বিদ্যালয়ে (প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার করে) ১৩ লাখ ২০ হাজার। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৬ টি বিদ্যালয়ে ( প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার করে) ৩০ লাখ ৪০ হাজার এবং প্রাক প্রাথমিকে ৭৭টি বিদ্যালয়ে ১০ হাজার করে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে গণেশ আর্দশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই স্কুলে মাইনর মেরামত বাবদ দুই লক্ষ টাকা, রুটিন মেইটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার এবং প্রাক প্রাথমিকে ১০ হাজারসহ মোট আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো কাজের বিবরনিতে দেখা গেছে, প্লাস্টার বাবদ ৬ হাজার ৬শ ৬৩, ওয়েদার কোর্ট বাবদ ৩৩ হাজার ৬ শ ৮০,প্লাস্টিক পেইন্ট বাবদ ৭৮ হাজার ৮ শ ৪৪, দরজা জানালার পেইন্টিং বাবদ ১২ হাজার ২৭৯,নেমপ্লেট বাবদ একহাজার, সিআইসিট বাবদ ১২ হাজার , ৫ টি ফ্যান বাবদ ১৬ হাজার ২শ এক, পিবিসি ক্যাবল বাবদ ২০ হাজার ৯শ ২৮, টুপিন বাবদ ৩ হাজার ৯৯ এবং অন্যান্য কিছু সামগ্রীসহ মোট ২ লক্ষ টাকার মিল রেখে তা নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে ভাউচারের সামগ্রীর সাথে কোন মিল খুঁেজ পাওয়া যায়নি।

গনেশ আর্দশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেদায়েত আলী বলেন, আমি কোন বরাদ্দ দিয়ে কি কাজ করেছি তা আপনাকে দেখাতে বাধ্য নই। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া আমি আপনাকে এ বিষয়ে কিছু বলবনা।
বাফলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যাক্ত একটি টিনশেট বিল্ডিংয়ের সামনের অংশে রং করে বরাদ্দের পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এসময় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শরিফা আক্তার বলেন, আপনারা কে আগে পরিচয় দেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি তাঁর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের জানান, এই বিল্ডিংয়ের একটি রুমে ক্লাস করানো হয়। বরাদ্দের টাকা দিয়ে বিল্ডিংয়ের সমস্ত টিন পরিবর্তন করা হয়েছে এবং বিল্ডিংটির চারদিকে প্লাস্টার এবং দরজা জানালা মেরামত করা হয়েছে। কিছু পয়সা বেঁেচ যাওয়ায় তা দিয়ে দুটি ফ্যান কিনেছি।

ওই বিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ওয়ারেছ আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে স্লিপের বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার প্রাক প্রাথমিকের ১০ হাজার এবং মাইনর মেরামত বাবদ দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ ছিল। দুই লাখের বরাদ্দ দিয়ে পুরাতন ভবনের জন্য সারে ১৪ বান্ডিল টিন কিনেছি যার প্রতি বান্ডিলের মূল্য ৬ হাজার। ওই হিসাবে সারে ১৪ বান্ডিল টিনের দাম হল ৮৭ হাজার। বাকি টাকা কি করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান সব হিসাব প্রধান শিক্ষকের কাছে রয়েছে।

দক্ষিন দুরাকুটি ঘোপাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি মাত্র ভবন। ভবনটির চারদিকে কিছু করে অংশ রং করা হয়েছে। এসময় বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান অসুস্থাজনিত কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় বিদ্যালয়ের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি একরামুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজ আমি নিজেই করেছি। কি কি কাজ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনের ছাঁদ চুইয়ে পানি পরে তাই নতুন করে ছাঁদ ঢালাই দিয়েছি চাইলে ছাদের উপরে উঠে দেখতে পারেন। এছাড়াও বড়ভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন চাঁদখানা বাবুপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধানগণ ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তদারকি কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে আতœসাৎ করেছেন।

এদিকে স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষকরা তা না কিনে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন তা পকেটজাত করেন। এছাড়াও রুটিন মেইনটেনেন্স কাজে ৪০ হাজার এবং প্রাক প্রাথমিক ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ক্লাস্টার অফিসারদের সহায়তায় ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আতœসাৎ করেছেন।

পিইডিপি -৪ এর আওতায় মাইনর মেরামত কাজ বাস্তবায়নের তদারকি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার নইমুল হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা নিজে নিজে বিল ভাউচার এডজাস্ট করে বিল উত্তোলন করেছে। কিন্তু কাজে কোন অনিয়ম হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শরিফা আক্তার বলেন, প্রতিটি ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং কাজ বাস্তবায়নের তদারকি কর্মকর্তার প্রত্যায়ন সাপেক্ষে বিল ছাড় দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল হাজিরা মেশিন না কিনে কিভাবে স্লিপের বরাদ্দ উত্তোলন হল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের অর্থ নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই টাকা ব্যায় করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে