Kishorgonj

মোঃ আব্দুল মান্নান, কিশোরগঞ্জ, (নীলফামারী), বিশেষ প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের অধিনে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মসূচীর কয়েকটি প্রকল্পের কাজ না করেই শতভাগ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে বরাদ্দকৃত সমস্ত টাকা উত্তোলন করে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে জমা রাখার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ইং অর্থবছরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২০ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বিদ্যালয় মেরামত বাবদ পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৩৯ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকা করে ৭৮ লাখ টাকা ও ৩৬ টি বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে ৫০ লাখ ৪০ হাজার বরাদ্দ পেয়েছে মর্মে জানা যায়।
বরাদ্দ পত্রের লিখিত নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে ৩০শে জুন’ এর মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকটি বিদ্যালয় ব্যতিত বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। অথচ তালিকাভুক্ত বিদ্যালয়গুলো থেকে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন।
বাস্তবে ক্ষদ্র মেরামত প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে এবং সেই টাকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার একাউন্টে রাখা হয়েছে। ৩০শে জুনের আগেই সব কাজ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। অথচ উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে বিল ফরম দাখিল করে পরে ভাউচার জমা দিয়ে সমন্বয় করার মর্মে উত্তোলন করা হয়েছে সমস্ত টাকা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফা আখতার কাজ শেষ না করেই নিজেই বরাদ্দ ছাড়ের টাকা উত্তোলন করে একাউন্টে রেখে দেন। এ নিয়ে পুরো উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরীফা আখতার জানান, করোনাকালীন সময়ে অনেকেই দেরিতে কাজ শুরু করেছেন। ৩০শে জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা ল্যাপস হয়ে যাবে। তাই অগ্রিম বিলের মাধ্যমে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে উপজেলা একাউন্টে জমা রেখেছি। প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিল পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এই পরিশোধ দেখানো হবে ব্যাকডেটে ৩০শে জুনের মধ্যে। সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙুলি প্রদর্শন করে শিক্ষা অফিসার কীভাবে বিলের ফরম দাখিল করে শতভাগ কাজ সমাপ্তির বিল উত্তোলন করলেন ও অর্থবছর শেষ হবার প্রায় দুই মাস পরেও বরাদ্দকৃত টাকা স্কুলগুলোর মধ্যে বিতরণ না করে কীভাবে তিনি একাউন্টে টাকা জমা রাখলেন তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, উল্লেখিত বরাদ্দের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিল ও ভাউচার প্রাপ্তির পর তা বিধি মোতাবেক ছাড় করা হয়েছে। কাজ হলো কি হলো না তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নেই, আমরা বিলের যাবতীয় কাগজপত্র পেয়ে বিল ছাড় করেছি। তবে তার দপ্তরের সিনিয়র অডিটর তোফাজ্জল হোসেনের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, শুধু মাত্র বিল ফরমের উপর ভিত্তি করে বিল প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে ভাউচার পেলে তা সমন্বয় করা হবে। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার এ তথ্যটি গোপন করে নিজেকে অনিয়মের সাথে জড়িয়ে ফেলেছেন।
সংস্কার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি) নাঈমুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত বিল সমূহ পাশ করতে আমি ৩০ শে জুন ২০২০ইং তারিখ পর্যন্ত কোন প্রত্যায়ন দেই নি। কাজ শেষ হলে দেখে আপডেট তারিখেই প্রত্যায়ন দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, বিল পাশের ব্যাপারটা সারা বাংলাদেশে একই চিত্র। তাছাড়া করোনাকালীন মুহুর্তে একটু দেরি হতে পারে। মে মাসে বরাদ্দ আসলে কীভাবে ১ মাসের মধ্যে কাজ করা সম্ভব, তাই একটু সময় লাগতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে