orrange

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ আমাদের দেশের লোকজনের ধারণা কমলা সাধারণত পাহাড়ী অঞ্চলে চাষ হয়। এদেশের মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের জন্য উপযোগী না। কিন্তু এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী গ্রামের এক শিক্ষক দম্পতি।

কমলা চাষে সফল হওয়া এই দম্পতি হচ্ছেন মোজাম্মেল হোসেন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ও পশ্চিম সারডুবী পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা খাতুন মজুমদার।

প্রথমে শখ করে দুই-একটি গাছ লাগালেও এখন প্রায় দেড় একর জমিজুড়ে বিস্তৃত ফল বাগানের মালিক এই শিক্ষক দম্পতি। যেখানে রয়েছে কমলা, মালটা, প্যাসনসহ নানা জাতের ফল।

কমলা চাষের জন্য ২০১৪ ও ২০১৫ সালের কৃষি মেলায় পুরষ্কিত হয়েছেন এই শিক্ষক দম্পতি। এ বছর কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ফাতেমা খাতুন পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’।

সরেজমিনে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক দম্পতির নিবীড় মমতায় গড়ে তোলা বাগানটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩৫০টি কমলা গাছ রয়েছে। যার মধ্যে ৮০টি গাছে ধরেছে কমলা। যা দেখতে আমদানী করা ভারত বা ভুটানের কমলার মতই। বাগানে আছে ৫০টি মালটা গাছ। এর বাইরে বেশ কিছু প্যাসন গাছে ফল এসেছে যা স্থানীয়ভাবে ‘ট্যাং ফল’ নামে পরিচিত। এসবের বাইরেও রয়েছে বিভিন্ন জাতের দেশী বিদেশী ফলদ গাছ।

ওই দম্পত্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০২ সালের দিকে ভুটানি কমলা খেয়েই মূলত এর নেশা চেপে বসে তাদের। ফলে তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কমলা চাষের। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে কমলা চাষের নিয়ম সম্বন্ধে জানেন। প্রথমে মাত্র কয়েকটি চারা দিয়েই শুরু করেছিলেন। সফলতা পেয়ে পরবর্তীতে বাড়াতে থাকেন বাগানের পরিধি। নিজের লাগানো কমলা ঠিক ভারত বা ভুটান থেকে আমদানী করা কমলার স্বাদের মতো হওয়ায় হাত দেন অন্যান্য ফল চাষেও। এসব ফল চাষে অন্যদেরও উদ্ধুদ্ধ করতে বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন তুলনামূলক স্বল্প মূল্যের নার্সারি। সেখান থেকে এখন অনেকেই চারা সংগ্রহ করে নিজেরাই বাগান তৈরি করছেন।

এ বিষয়ে খলিলুর রহমান জানান, নার্সারীর অনেক চারা নিয়ে বেশ কিছু বাগান গড়ে উঠেছে। লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন চারা কেনার জন্য অনেকে আসেন। এ পর্যন্ত আমি প্রায় ৫০০০ এর অধিক চারা ও কলম বিক্রি করেছি। এ বছর শুধু চারা গাছ বিক্রি করেই আয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ফাতেমা খাতুন বলেন, ভুটানের সেই কমলা খেয়েই আমরা এক ধরণের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম একই স্বাদের কমলা নিজেরাই চাষ করবো। ফলে নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে সফলও হয়েছি আমরা।

এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনোয়ার হোসেন বলেন, ওই শিক্ষক দম্পতির বাগানের কমলার স্বাদ অতুলনীয়। আমি নিজে ওই বাগানে গিয়েছিলাম। এ অঞ্চলের বেলে, দো-আঁশ সমতল মাটিতে এই কমলা চাষ ব্যাপক সাফল্যও আনতে পারে। কেউ এ ধরণের বাগান গড়ে তুলতে চাইলে কৃষি বিভাগ তাকে নানাভাবে সহযোগীতা করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে