ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে অবাধ তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য। এই কারণেই আমরা তথ্যপ্রবাহের সকল মাধ্যমের সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি।’
আজ বেলা সাড়ে ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) ৬ ঘণ্টা সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলায় তার সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৭৫ সালের সেই কালো অধ্যায় যদি রচনা না হতো, তাহলে ২০ বছর আগেই দেশের উন্নয়ন হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে এরপর থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর দেড় ঘন্টা সম্প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ২০ বছর পর এসে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ৬ ঘন্টা সম্প্রচারের উদ্বোধন করলো।
ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণ চ্যানেল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় শহরগুলোতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র চালু করা যাবে বলে আশা করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনকালে গণভবনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।
এখন থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সম্প্রচারিত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষায় প্রথম টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন ডিআইটি ভবনের নিচতলায় এনইসি (নিপ্পন ইলেকট্রনিক কোম্পানী) জাপানের সহযোগিতায় আত্মপ্রকাশ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে একটি সরকারী গণমাধ্যমে রূপ দেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী ডিআইটি’র ক্ষুদ্র পরিসর থেকে রামপুরার বৃহত্তর পরিমন্ডলে বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থানান্তর হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমিই প্রথম বেসরকারি পর্যায়ে টেলিভিশন স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করি। এ পর্যন্ত ৩২টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে ২৩টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারি এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও বিনোদন সরবরাহ এবং দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, পিআইডি, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, পিআইবি, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং বিএফডিসি কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যবস্থা এনালগ থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটালে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বিএফডিসি-তে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রবর্তণ’ শীর্ষক প্রকল্প সমাপ্তির পথে রয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে পিআইবিতে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের উন্নয়নে তার সরকার গৃহিত পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম কোর্স এবং টেলিভিশন বিষয়ক প্রথম কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। গত ৮ বছরে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ১২ হাজারেরও বেশি সাংবাদিককে বিনাখরচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজ উদ্যোগেই সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাষ্ট করে দিয়েছি।
চট্রগ্রাম কেন্দ্রের সম্প্রচার সময় বাড়ানোর ফলে চট্রগ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ আরো সহজ হবে বলেন, প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন কাজ করছে। বিটিভি শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয় জনসচেতনতার মাধ্যম হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য ৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। বিজয়ের এ মাসে সংস্কার ও আধুনিকায়ন শেষে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে ৬ ঘন্টা সম্প্রচারে যাচ্ছে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে