রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া থেকে মিরপুর দিয়াবাড়ি বেড়িবাঁধ সড়কে চুরি তেল ক্রয়-বিক্রয় সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের সামনেই চলছে তেল বেচাকেনা। এমনকি তেলের বিনিময়ে মাদকও পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে।
বিভিন্ন বাস, ট্রাক, লরি, কাভারভ্যান, মাইক্রেবাস ও প্রাইভেটকারের মাদকাসক্ত চালক, হেলপার এই সড়কে চোরাই তেল বিক্রি করে বিনিময়ে নিচ্ছে মাদক। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের গাড়ির ড্রাইভারেরা তেল চুরি করে এই সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করছে।
সরেজমিনে এই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ১২টি গ্রুপ এই সড়কে চুরির তেল ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। কামারপাড়া সাহেব আলী মাদ্রাসা ও আলম চাঁদ গ্যারেজের পশ্চিম পাশে আব্দুল কুদ্দুস সিন্ডিকেটের দুটি দোকান, তালতলা অফিসের পাশে রানা ও জলিলের দোকান, মেট্রোরেলের পূর্ব পাশে যুবরাজের দোকান, তুরাগ থানা নতুন ভবনের পাশে রুস্তমপুরে রাকিবের দোকান, এর একটু সামনে মন্জু ও লোকমান ভান্ডারির দোকান, এরপর আলী আসকরের দোকান, এরপর সড়ক ধরে একটু সামনে আগালেই আলামিন ও যুবরাজের দোকান, কুদ্দুস সিন্ডিকেটের আরেকটি দোকান, পঞ্চবটি বাসস্ট্যান্ডের পাশে কচি ও জয় সিন্ডিকেটের দোকান। এরপর আরও কয়েকটি দোকানের খোঁজ পাওয়া যায়। এসব দোকানে দিনে রাতে চব্বিশ ঘণ্টাই চলে চোরাই তেল বেচাকেনা। এখানে ডিজেল প্রতি লিটার ৯০ থেকে ১০৫ টাকা, পেট্রোল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, অকটেন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে কিনতে দেখা গেছে। সব ধরনের তেল বাজারদর থেকে চার-পাঁচ টাকা কমে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
প্রতিটি দোকানে দুই-তিনজন কর্মচারী গাড়ি থেকে তেল নামানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। কোনো গাড়ি ঢুকলেই দোকানের দুইপাশ থেকে পর্দা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ড্রাইভারের চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি থেকে তেল নামানো হয়। কখনো বা ড্রাইভাররা টাকা নেন। কখনো তেলের বিনিময়ে নেন মাদক। এক লিটার তেলের বিনিময়ে দেওয়া হয় এক পুরিয়া গাঁজা। দুই লিটার তেলের বিনিময়ে দেওয়া হয় একপিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এভাবেই চাহিদা অনুযায়ী চলছে ব্যবসা। প্রতিমাসে কোটি টাকার তেল বাণিজ্য চলছে এই সড়কে। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়ে এই চক্রটি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও রাতে ডিউটি পুলিশকেও দিতে হয় টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সড়কে প্রথমে কুদ্দুস সিন্ডিকেট তেল চুরির ব্যবসা শুরু করে। প্রায় ত্রিশ বছর কুদ্দুস এই ব্যবসা করে আসছে। তেল চুরির সাথে কুদ্দুসের দোকানের কর্মচারীরা মাদক, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে কুদ্দুসের দোকানের কর্মচারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে। এছাড়াও রাকিব, আলী আসকর, আলামিন নিজেদের যুবলীগ পরিচয় দিয়ে দেদারসে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
গত সোমবার বেড়িবাঁধের পঞ্চবটি কচি ও হৃদয়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিমানের একটি গাড়ি ওই দোকানে ঢুকলে দুইপাশ থেকে পর্দা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিশ লিটার তেল নামাতে দেখা যায়। গাড়ির ড্রাইভার তেল দিয়ে টাকা নিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। এই প্রতিবেদক তার সাথে কথা বলতে চাইলে ড্রাইভার কথা বলতে রাজি হয় না।
পরে দোকানের মালিক হৃদয়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের গাড়ি থেকে তারা চোরাই তেল ক্রয় করেন।
পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান।
দোকানের পিছনে বসবাসের জন্য ঘর তুলে সেখানে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে পরিবার নিয়ে কচি ও হৃদয় দম্পতি বসবাসও করছেন।
পঞ্চবটি পুলিশ বক্সের পিছনেই অবৈধ দখল নিয়ে এই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে পুলিশের সামনেই। পুলিশ দেখেও যেন দেখে না।
deshbangladaily