আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আবারও সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এমন তথ্য পেয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক  শ্রীলঙ্কা। দেশজুড়ে নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি ১০ হাজার সেনা। গোয়েন্দাদের কাছে আরও হামলার তথ্য রয়েছে এমন তথ্য প্রচার করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। হামলার আশঙ্কায় মুসল্লিদের গতকাল জুমার নামাজের জন্য মসজিদে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি। মসজিদ কিংবা গির্জায় না গিয়ে বাড়িতেই নামাজ বা প্রার্থনা করার আহ্বান জানানো হয়। সতর্কতার পাশাপাশি তদন্তও চলছে সমানতালে। সন্দেহভাজন জঙ্গি উল্লেখ করে ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। হামলায় আইএসের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

অবশ্য শ্রীলঙ্কার তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হামলার মূল হোতা আত্মঘাতী হলেও সংশ্লিষ্ট আরও ১৪০ জনকে চিহ্নিত করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতিমধ্যেই ৬০ জনকে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গাড়িবোমা হামলার ঝুঁকির কথা জানানোর পর আপাতত মসজিদ বা গির্জায় জমায়েত না হয়ে বাড়িতেই প্রার্থনা সারার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কলম্বোতে মার্কিন দূতাবাসও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে আরও হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে। রয়টার্স লিখেছে, ইস্টার সানডের হামলার পর শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু মুসলমানরা পাল্টা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বোমার ভয়ের পাশাপাশি গ্রেফতার-হয়রানি এড়াতে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংগঠন অল সিলোন জমিয়াতুল উলামা শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরেই নামাজ আদায়ের পরামর্শ দেয়। ক্যাথলিক চার্চের কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিতও একই ধরনের আহ্বান জানিয়ে শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টানদের উদ্দেশে বলেছেন, পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত গির্জায় সমবেত না হতে আহ্বান জানানো যাচ্ছে। মসজিদ ও গির্জার চার পাশে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ। শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন সংস্করণের খবর, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা জানিয়েছেন, সিরিজ বোমা হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট ১৪০ জনকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

এতদিন দেশটি হামলায় শুধু বিদেশি সংযোগের কথা বলে এলেও প্রেসিডেন্ট আইএস সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারে অভিযানের কথা জানালেন। লঙ্কান কর্তৃপক্ষ হামলার জন্য স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতকে দায়ী করে আসছিল। লঙ্কান গোয়েন্দারা জাহরান হাশিম নামের উগ্রবাদী ধর্মীয় নেতাকে হামলার মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি করেছে। তবে হামলার দায় স্বীকার করে আইএসের দেওয়া বার্তায় হামলাকারী হিসেবে যে ৮ জনের ছবি দেখানো হয়েছে সেখানে মুখ ঢাকা থাকলেও অন্যদের সঙ্গে হাশমিকে মুখ খোলা অবস্থায় দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা বলেছেন, হামলার সন্দেহভাজন মূলহোতা জাহরান হাশিম মোহাম্মদ ওরফে কাশিম মোহাম্মদ জাহরান সাংগ্রিলা হোটেলের বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এই হোটেলে হামলার নেতৃত্বে ছিল হাশিম। তার সঙ্গে ছিল আরেক আত্মঘাতী। যাকে ইলহাম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ পুলিশের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য হামলার কোনো তথ্য তাকে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে সিরিসেনা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে লঙ্কান তরুণরা আইএসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আমি শ্রীলঙ্কা থেকে আইএসকে উৎখাত করব। এটা করার সামর্থ্য আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীর রয়েছে।আইএস সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, আমি নিশ্চিত করেই বলছি ইস্টার সানডেতে হামলায় জড়িত স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছিল। আইএস এ হামলায় স্থানীয় দলকে বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে। অস্ট্রেলীয় পুলিশের তদন্তে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান স্কট মরিসন।

‘মূলহোতা’ দীর্ঘদিন ধরেই উগ্রবাদ ছড়াচ্ছিল : শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, দীর্ঘদিন ধরেই মুসলমানদের উসকানি দেওয়ারও অভিযোগ আছে হাশিমের বিরুদ্ধে। আইএসপন্থি সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে হাজার হাজার অনুসারী জোগাড় করে সে। শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদ বলেছেন, হাশমি তার কোরআন শিক্ষা ক্লাসে তরুণদের উগ্রবাদে আকৃষ্ট করছিল। এ জন্য সতর্কও করেছেন তিনি।

সন্দেহভাজনের ছবিতেও ভুল : আত্মঘাতী বোমা হামলায় জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ ছয়জনের ছবি প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে এ তালিকায় ভুলে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারীর ছবি প্রকাশ করে ফেলায় ‘ক্ষমা চেয়েছে’ শ্রীলঙ্কার পুলিশ। বিবিসির খবর, সন্দেহভাজনদের তালিকায় লেখক ও সমাজকর্মী আমারা মজিদের ছবি দিয়ে বলা হয়, তার নাম ফাতিমা খাদিজা। বাল্টিমোরে জন্ম নেওয়া আমারার বাবা-মা শ্রীলঙ্কার নাগরিক। তিনি ‘দ্য ফরেইনারস’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেটিতে ইসলাম সম্পর্কে চলমান ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেছেন। গত রবিবার ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা, চারটি অভিজাত হোটেল এবং একটি বাড়িতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। যদিও প্রথমে নিহতের সংখ্যা ৩৫৯ বলা হয়েছিল। পরে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গণনার ভুলে মৃতের সংখ্যা বেশি বলা হয়েছিল। আসলে নিহত হয়েছেন ২৫৩ জন।

B/P/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে