ডেস্ক রিপোর্টঃ বাংলাদেশে একটি যৌথ প্রযোজনার বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে টানা বিতর্কের এক পর্যায়ে এটির অনাপত্তি পত্র বাতিল করেছে একটি সরকারি পর্যালোচনা কমিটি।
ঢাকার পরিচালক মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীর তৈরি ‘ডুব’ নামের এই ছবিটি বাংলাদেশের প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু বিতর্কিত অধ্যায়ের সাথে মিলে যায়, এমন এক খবরের ভিত্তিতে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছবিটির ব্যাপারে ঘোর আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।
তিনি সম্প্রতি এই আপত্তির কথা একটি চিঠির মাধ্যমে সেন্সর বোর্ডকেও জানান।
কিন্তু পরিচালক মি. ফারুকীর বক্তব্য, ছবিটির গল্প ও চরিত্ররা কাল্পনিক।
তিনি এই অনাপত্তি পত্র বাতিলকে বেআইনী বলছেন এবং সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে প্রয়োজনে আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
‘ডুব’-এর পাত্রপাত্রীরা হেভিওয়েট।
রয়েছেন মুম্বইয়ের ইরফান খান, কলকাতার পার্ণো মিত্র, ঢাকার নুসরাত ইমরোজ তিশা, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ।
প্রযোজনা করেছে যৌথভাবে ঢাকার জাজ মাল্টিমিডিয়া ও কলকাতার এসকে মুভিজ। বিনিয়োগ আছে ইরফান খানেরও।
এই ছবির সব কাজ শেষ। এখন মুক্তির অপেক্ষা।
যৌথ প্রযোজনার ছবি মুক্তির শর্ত হিসেবে সেন্সর বোর্ডে জমা দেবার আগেই নিতে হবে এফডিসির একটি রিভিও বোর্ডের অনাপত্তিপত্র।
গত বুধবার বোর্ড সেই অনাপত্তিপত্র দেয়ও, কিন্তু পরদিন আরেক চিঠি দিয়ে স্থগিত করে তা।
বিবিসিকে একথা জানিয়ে মি. ফারুকী বলেন, “আমার ছবিটি ভার্চুয়ালি আটকে গেল। অফিসিয়ালি এটা নিষেধাজ্ঞা নয়, কিন্তু কার্যত আমরা আর সামনে যেতে পারছি না। কারণ এটা আর পরবর্তী ধাপে যাবে না। সেন্সর বোর্ডে যেতে পারবে না। ”
এই স্থগিতাদেশের কারণ কি জানতে চাইলে রিভিউ বোর্ডের প্রধান ও এফডিসির মহাব্যবস্থাপক তপন কুমার ঘোষ বিবিসিকে বলেন, এ নিয়ে আজ কোন কথা বলবেন না। আগামিকাল (রবিবার) অফিস খুললে পরে তিনি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন।
ছবিটি নিয়ে মেহের আফরোজ শাওনের যে আপত্তি তার কারণে এই স্থগিতাদেশ কী না, সেটা স্পষ্ট না হলেও তার লিখিত আপত্তি সেন্সর বোর্ড পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের সচিব মুন্সী জালাল উদ্দীন।
আর সেন্সর বোর্ড এবং এফডিসি দুটিই তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান।
এই ছবির কাহিনি নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে নির্মাতা মি. ফারুকী এবং হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রীর মধ্যে এক ধরণের বাদানুবাদ চলছে, যা প্রায়ই জন্ম দিয়েছে খবরের।
ভারত ও বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা মারফৎ ছবিটির বিষয়বস্তু জেনেছেন উল্লেখ করে মেহের আফরোজ বলেন, “যে ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সেগুলো যথেষ্ট স্পর্শকাতর। এতে সত্যতার অভাব আছে। মূল যে পটভূমি উঠে আসছে বলে বলা হচ্ছে, সেটা বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিউমার। রিউমার থেকে একটা ছবি হতে পারে না, হুমায়ূন আহমেদের মত একজন লিজেন্ডারি ফিগার নিয়ে”।
হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কোন অংশের সাথে এই চলচ্চিত্রের মিল আছে কি?
পরিচালক মি. ফারুকী বলছেন, তিনি ছবির শুরুতেই বলেছেন ছবিটির পাত্রপাত্রী এবং কাহিনি সবই কাল্পনিক।
তবে ছবির যে বিষয়বস্তুর কথা বলে হচ্ছে তা যেমন তিনি স্বীকারও করছেন না আবার উড়িয়েও দিচ্ছেন না।
“আমরা এটার উত্তর দিতে চাই না। দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখবে। দেখে বিচার করবে। মিল খুঁজে পেলে পাবে। না পেলে পাবে না”।
কিন্তু যে ছবি এখনও মুক্তি পায়নি, সেটির বিষয়বস্তু নিয়ে আগে থেকে কেন তথ্য প্রকাশ করল এর কলাকুশলীরা? এটা কি পাবলিসিটি স্টান্ট? সে প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
আবার একটি চলচ্চিত্র মুক্তির পথে আমলাতন্ত্রিক বাধা সৃষ্টি করাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী বলেও অভিহিত করছেন কোন কোন চলচ্চিত্র সমালোচক।
বি/বি/সি/এন