ডেস্ক রিপোর্টঃ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। নিয়ম অনুসারে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফজর বাংলাদেশের বিশিষ্ট তাবলিগের বুজুর্গ মাওলানা ওমর ফারুকের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় ইজতেমার প্রথম ধাপের। ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় গত বছরের চেয়ে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে ২৮টি খিত্তা এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৯টি খিত্তা স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পর্বে ১৬ জেলা এবং দ্বিতীয় পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবে। এবারের ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের ১০ হাজারের বেশি মেহমান অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপির পাঁচটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

প্রথম দফায় যেসব জেলার মুসল্লিরা আসবে : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম দফায় ১৬টি জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবে। প্রথমবারে অংশ নেওয়া জেলা ও খিত্তা নম্বরগুলো হলো ঢাকা জেলার (খিত্তা নম্বর-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৬, ১৮, ২০, ২১), পঞ্চগড় (খিত্তা নম্বর-৯), নীলফামারী (খিত্তা নম্বর-১০), শেরপুর (খিত্তা নম্বর-১১), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা নম্বর-১২, ১৯), গাইবান্ধা (খিত্তা নম্বর-১৩), নাটোর (খিত্তা নম্বর-১৪), মাদারীপুর (খিত্তা নম্বর-১৫), নড়াইল (খিত্তা নম্বর-১৭), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা নম্বর-২২, ২৩), ঝালকাঠি (খিত্তা নম্বর-২৪), ভোলা (খিত্তা নম্বর-২৫, ২৬), মাগুড়া (খিত্তা নম্বর-২৭) ও পটুয়াখালী (খিত্তা নম্বর-২৮) জেলার মুসল্লিরা অবস্থান করবে। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য ময়দানের উত্তর দিক থেকে ক্রমানুসারে দক্ষিণ দিকে খিত্তার নম্বর বসানো হয়েছে।

রেলওয়ে ও বাস সার্ভিস : টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা হালিমুজ্জামান জানান, বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতে ১৯টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৪ জানুয়ারি বাদ জোহর ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-ঢাকা এবং ১৫ জানুয়ারি লাকসাম-টঙ্গী বিশেষ ট্রেন চলবে। ১৪ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন ভোর ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চার জোড়া এবং টঙ্গী-ময়মনসিংহ দুই জোড়া, ঢাকা-টঙ্গী চার জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।

মোনাজাতের দিন চলবে শাটল বাস : গাজীপুরের তথ্য কর্মকর্তা এস এম রাহাত হাসানাত জানান, কাল শনিবার রাত থেকে রবিবারে আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত টঙ্গী কলেজ গেট থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুল্যান্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন বন্ধ থাকবে। তবে মোনাজাতের দিন রবিবার সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ৫৪টি বিআরটিসি বাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ৫০টি (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) শাটল বাস চলাচল করবে। এ ছাড়া চলচিত্র অভিনেতা ডিপজল মুসল্লিদের সেবায় ৫০টি বাস দিয়েছেন।

ইজতেমায় যানবাহন চলাচল এবং পার্কিং ব্যবস্থাপনা : দুই পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি রাত ১০টা থেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত ঢাকা বিভাগ—সোনারগাঁ জনপথ চৌরাস্তা থেকে দিয়াবাড়ী খালপাড় পর্যন্ত, ঢাকা মহানগর—উত্তরাস্থ শাহজালাল এভিনিউ, নিকুঞ্জ-১ ও নিকুঞ্জ-২-এর আশপাশের খালি জায়গা, ঢাকা জেলা—আশুলিয়া কলেজ ও হাই স্কুল মাঠ, চট্টগ্রাম বিভাগ—গাউছুল আজম এভিনিউ (১৩ নম্বর সেক্টর রোডের পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত হয়ে গরিবে নেওয়াজ রোড), সিলেট বিভাগ—উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর শাহমখদুম এভিনিউ, খুলনা বিভাগ—উত্তরা ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গা, রংপুর বিভাগ—কামারপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড ও ১০ নম্বর সেক্টর খালি জায়গা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগ—প্রত্যাশা হাউজিং, বরিশাল বিভাগ—ধউড় ব্রিজ ক্রসিংসংলগ্ন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের খালি জায়গা ও বিআইডাব্লিউটিএর ল্যান্ডিং স্টেশন, গাজীপুর জেলা—টঙ্গী কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশের রাস্তার উভয় পাশ, শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠ ও সংলগ্ন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠ, জয়দেবপুর চৌরাস্তা ট্রাকস্ট্যান্ড, চান্দনা হাই স্কুল মাঠ, টঙ্গীর কে-২/নেভি সিগারেট ফ্যাক্টরির পাশে।

যেসব সড়কে যান চলাচল নিষেধ : তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল রেইনবো ক্রসিং থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে ধউড় ব্রিজ পর্যন্ত। প্রগতি সরণি ক্রসিং থেকে রামপুরা ব্রিজ। প্রগতি সরণি ক্রসিং থেকে আব্দুল্লাহপুর। আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর ব্রিজ, আশুলিয়া ব্রিজ থেকে আব্দুল্লাহপুর-প্রগতি সরণি ও টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিমানযাত্রী ও ক্রু বাহী যান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স চলতে পারবে।

যেসব সড়কে যানবাহন চলবে : ঘোড়াশাল থেকে কালীগঞ্জ-পূবাইল হয়ে আসা যানবাহন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব মারকুল (কে-২) পর্যন্ত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকাগামী সাধারণ যানবাহনগুলো ওই রাস্তা এড়িয়ে কাঁচপুর/যাত্রাবাড়ী সড়কে চলাচল করতে পারবে। ইজতেমায় গমনেচ্ছুক মুসল্লি, উত্তরাবাসী, বিমানযাত্রী ও ক্রু বাহী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া সব ধরনের যানবাহন বিমানবন্দর সড়ক পরিহার করে বিকল্প পথে মহাখালী-বিজয় সরণি হয়ে মিরপুর-গাবতলী সড়ক ব্যবহার করবে। ঢাকা মহানগর থেকে যেসব মুসল্লি হেঁটে ইজতেমাস্থলে যাবে তাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বর-আজমপুর-আব্দুল্লাহপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পরিহার করে তুরাগ নদীর ওপরে নির্মিত বেইলি ব্রিজ অথবা কামারপাড়া ব্রিজ দিয়ে ইজতেমাস্থলে যাতায়াত করতে বলা হয়েছে।

মিডিয়া সেন্টার : ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তরপাশে নিউ মুন্নু ফাইন কটন মিলস মাঠে টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে একটি অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। মিডিয়া সেন্টারে বিদ্যুৎ ও কম্পিউটারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

র‌্যাবের প্রেস ব্রিফিং : গতকাল বিকেলে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করেন র‌্যাবের এডিজি অপারেশন কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলা বা নাশতকার আশঙ্কা নেই। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সদস্যরা পুরো ময়দান পর্যবেক্ষণ করছেন।

 

 

 

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে