আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্রোত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে পদ্মায় ৪ নটিক্যাল মাইল বেগে স্রোত বইছে। এই স্রোতের মধ্যে আমরা ফেরি চলাচলে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।স্রোত কমলেই এ রুটে ফেরি চলাচল শুরু করা হবে।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার বিনয় জর্জ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

শিমুলিয়া ঘাটে কবে থেকে ফেরি চালু হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ রুটে পদ্মা নদীতে এখন ৪ নটিক্যাল মাইলের স্রোত বইছে। এর নিচে আসলে তখন আমরা চালু করতে পারবো। কিন্তু পদ্মায় পানির প্রবাহ এখনও বাড়ছে। আজও (৮সেপ্টেম্বর) আমরা খবর নিয়েছি অতিরিক্ত পানি প্রবাহ আছে। এ অবস্থায় শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ঘাটে যেতে অসুবিধা নেই, কিন্তু ফেরাটা খুব সমস্যা। কারণ আমাদের চ্যানেলটা ইত্যোমধ্যে ৫০ শতাংশ ভাঙন হয়ে গেছে। এটা এখন থাকবে কিনা তাও বলা যাচ্ছে না। তাই এতো স্রোতের মধ্যে আমরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।

তিনি বলেন, গত বছর যখন ফেরি চলছে তখন পদ্মা সেতুর ওপরে স্প্যান বসানো ছিল না। বর্তমানে একটা সুনিদিষ্ট পকেটের মধ্য দিয়ে আমাদের ফেরিগুলো চালাতে হয়। পদ্মা সেতুর সব স্প্যান বসে গেছে, সেতু অলমোস্ট রেডি আছে। এ রকম একটি অবস্থায় যখন নদীতে ঘূর্ণায়ন শুরু হয় তখন ফেরি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন হয়। এরই মধ্যে কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেছে। এই ঘটনাগুলোর কারণে আমরা যতটুকু তাদের উদাসীনতা ও কর্তব্যে অবহেলা ছিল সেজন্য ব্যবস্থাও নিয়েছি। তারপরও জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখেছি এবং সে ব্যাপারে সবাই মতামত দিয়েছেন। সেই কারণে বলেছি, এমন ঘটানার মধ্য দিয়ে আমরা দেশবাসীকে আর আতঙ্ক বা পেনিকের মধ্যে রাখতে চাই না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু এমন একটি সেনসেটিভ জায়গায় চলে গেছে। দেশের মানুষ পদ্মা সেতুকে আপন স্থাপনা মনে করে। কাজেই এ জায়গায় আমরা খুব সতর্ক আছি। এতে ‘পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা বলেছি পানির স্রোতনা কমা পর্যন্ত আমরা ফেরি চলাচলটা বন্ধ রাখছি।

বিকল্প ফেরিঘাটের ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝিরকান্দিতে আমরা বিকল্প ফেরিঘাট তৈরি করেছি। কিন্তু ওখানে ১৩ নং পিলারের সামনে ইত্যোমধ্যেই পলি বা বালি জমে গেছে। সেখানে ফেরি চলাচল সম্ভব না। আমরা দুইবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। কাজেই এখানে ড্রেজিং করতে হবে। আমরা ড্রেজার নিয়ে গেছিলাম কিন্তু ড্রেজার সেখানে দাঁড়াতে পারেনি তীব্র স্রোতের কারণে। কাজেই আমরা এ মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। সেজন্য আমরা হরিনা-আলুবাজার, পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া, কাজিরহাট-আরিচা ঘাটসহ ৩টি রুটে ফেরি বাড়িয়ে দিয়েছি।  

তিনি বলেন, আমার ধারণা আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি চলাচল করতে পারবে। তবে পদ্মা আসলেই অনিশ্চয়তার জায়গায় আছে। হয়তো কালকে আরেকটা রূপ নিতে পারে। এজন্য যখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, তখনই আমরা ফেরি চলাচল শুরু করে দেব।

পানির প্রবাহ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছে, কতোদিন লাগতে পারে ফেরি চলাচল করতে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে ড্রেজিং করায় এবার যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, বন্যা ততোটা হয়নি। এটা আমাদের ড্রেজিং করার সুফল। আমরা বিভিন্ন নদ-নদীতে ড্রেজিং করছি তার সুফল বন্যা কম হওয়া। ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব কয়টি গেট খুলে দিয়েছে, আমাদেরও তিস্তার সবগুলো গেট খুলে দিতে হয়েছে। অতিরিক্ত পানি আসছে তবে ড্রেজিংয়ের কারণে প্রবাহটা হচ্ছে। আমরা ধারণা করছি আগামী ১০ দিনের মধ্যে এটা নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। যদি অতিরিক্ত কোন বৃষ্টি না হয়।

তিনি বলেন, কয়েকটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমাদের মাস্টার-সুকানিরা একটা মানসিক ধাক্কার মধ্যে আছে। তাদের মধ্যেও কিছুটা ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচলকালে এ পর্যন্ত সেতুতে পাঁচবার আঘাত লেগেছে। এ অবস্থায় গত ১৮ আগস্ট থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে