মিঠুন মিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট : যুদ্ধ, সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সিনেমা নির্মাণের শুরুটাই হয়েছিল মূলত যুদ্ধ নিয়ে। পৃথিবীতে সংগঠিত সব যুদ্ধ নিয়েই সিনেমা নির্মিত হয়েছে। আর এই সিনেমাগুলোই নানা সময়ে সংগঠিত যুদ্ধকে জানার জন্য হয়ে উঠেছে প্রধান নিয়ামক। যুদ্ধনির্ভর সিনেমা নির্মাণের ধারা এখনো অব্যাহত এবং ভবিষ্যতে থাকবে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। যুদ্ধনির্ভর সিনেমাগুলো জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা।

৩০ লাখ শহীদের রক্তে কেনা লাল সবুজের স্বাধীনতা। যৌক্তিক কারণেই অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের মতো মুক্তিযুদ্ধের গাঁথা চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪৭ বছরে প্রায় ১০০টির মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য এবং প্রামাণ্যচিত্র চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধপূর্ব পর্ব, মুক্তিযুদ্ধপর্ব এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের নির্মিত হয়েছে। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধোত্তর পরিবেশের ঘটনাবলি, ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে রচিত কাহিনী চিত্রে ফ্লাশব্যাকে মুক্তিযুদ্ধকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখন অবধি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর সিনেমা নির্মাণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছেÑ ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে পরিমাণ গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, বই, প্রকাশনা, শিল্পকর্মসহ অন্যান্য যেসব সৃজনশীল কাজ হয়েছে, সে তুলনায় চলচ্চিত্রের সংখ্যা নিতান্তই কম। বলতে গেলে হাতে গোনা।
অথচ প্রায় প্রতিবছরই ৬০-৭০টির মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। অথচ বছরের তিন-চারটি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর সিনেমা পাওয়ার দুষ্কর। অথচ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো অনেক বিষয়ই আমাদের রয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রয়েছে ৩০ লাখ গল্প। এক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নির্মিত হতে পারে এক একটি চলচ্চিত্র। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের রয়েছে স্বতন্ত্র লোমহর্ষক গল্প কাহিনী। রয়েছে নানা ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং অজানা তথ্য। যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে নতুন করে জানার সুযোগ রয়েছে। এখনো যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের নিকট থেকে মিলতে পারে সিনেমা হওয়ার অনেক বিষয়।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব সিনেমা নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর গল্প, কাহিনী একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় সীমাবদ্ধ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাবলি রয়েছে যেগুলো নিয়ে হতে পারে বিখ্যাত সব সিনেমা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নির্মাণের যে জোয়ার লক্ষ্য করা যায়, তা ভাটায় পরিণত হয় তার মৃত্যু সঙ্গে সঙ্গেই। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে চাই। কেননা মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব এবং অহংকারের ফসল। স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষের অকাতরে জীবন উৎসর্গ, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের নজির সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করা দরকার। কিন্তু আমরা কেবল বলেই যাচ্ছি, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানানোর জন্য কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি সেটা পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। এ বিষয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে।
চলচ্চিত্র গণমাধ্যমের একটি শক্তিশালী শাখা। যার প্রভাবনী ক্ষমতা অন্য মাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি। কাজেই আমরা যদি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীনির্ভর সিনেমা নির্মিত হওয়া একান্ত জরুরি। দেশের আনাচে-কানাচে যে বীরত্বপূর্ণ ও হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো ছড়িয়ে আছে, সেগুলো অতিসত্বর চিত্রায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা কেবল বাণিজ্যনির্ভর সিনেমা নিয়েই ব্যস্ত। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা নির্মাণে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন এবং তা সময়ের দাবি।
এক্ষেত্রে সরকারকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সিনেমা নির্মাণে অনুদান প্রদান করতে হবে, যাতে প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দুই-তিনটি সিনেমা নির্মিত হয়। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বাগত এবং উৎসাহ জানাতে হবে। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে কিছু মহল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের উচিত হবে, তরুণদেরকে আরও বেশি মুক্তিযুদ্ধনির্ভর সিনেমা উপহার দেওয়া। যাতে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের বিষয়গুলো অনুভব করতে পারে। আমাদের মতো তরুণদের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি দেখা হয়নি। কাজেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ দেখার এবং অনুভব করার সুযোগ বয়ে আনবে।

 

লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে