জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ চাঁদাবাজি করতে ব্যার্থ হয়ে ষড়যন্ত্রমুলকভাবে সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজার সংষ্কার কাজ ব্যাহত করতে রেলওয়ের ম্যাজিষ্ট্রেটকে ভুল বুঝিয়ে অভিযান চালানোর নামে দোকানঘর নিলামের অপচেষ্টার চালানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধায় বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু চত্বরে (সাবেক সোহেল রানা মোড়) পথসভা করে বিক্ষোভকারীরা।

এসময় তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চিহ্নিত চাঁদাবাজ মোতালেব হোসেন হককে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। নয়তো পৌর বাজারের সবজি, গোশত, মাছসহ সব দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে বাজার অচল করার হুশিয়ারী করেন।

তারা আরও বলেন, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক তথাকথিত সাংবাদিক মোতালেব হোসেন হক দীর্ঘ দিন থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে।

ব্যবসায়ীরাসহ সৈয়দপুরের রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, সাংবাদিক, ঠিকাদার সকলে তার বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলে সে তার দাবানল পত্রিকায় তথ্যহীন, মিথ্যে প্রোপাগান্ডা মূলক বস্তাপচা সংবাদের মাধ্যমে সামাজিকভাবে হেয় করে চলেছে।

সম্প্রতি পৌর আধুনিক সবজি মার্কেট নির্মান (সংষ্কার) কাজ শুরু হলে ওই চাঁদাবাজ ঠিকাদারের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে। এতে সম্মত না হলে গত শুক্রবার রাত ১০ টায় রেলওয়ে বাজারে ঠিকাদার আসাদুল ইসলাম আসাদকে দেখা পেয়ে আবারও চাঁদা চায় নয়তো কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়।

এতে প্রতিবাদ করায় বাকবিতণ্ডা শুরু হলে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা মোতালেবকে গণধোলাই দেয়। এনিয়ে পরদিন মোতালেবের পক্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক, পৌর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বিক্ষোভ মিছিল করে।

তারপরদিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিনের নেতৃত্বে পৌর কাউন্সিলরবৃন্দ সহ উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পাল্টা বিক্ষোভ করে।

এদিকে গণধোলাইয়ের ঘটনায় মোতালেব মামলা করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে প্রতিশোধ নিতে রেলওয়ের পার্বতীপুর ভুসম্পত্তি অফিসের কানুনগো জিয়াউল হকের সাথে যোগসাজশে পাকশী ভুসম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুজ্জামান সরকারকে এনে পৌর সবজি বাজারে অভিযান চালায়।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরের দিকে এই অভিযানকালে ম্যাজিষ্ট্রেট সবজি মার্কেটের নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে দোকানঘরগুলো নিলামের নির্দেশ দেয়। এই দৃশ্য মোতালেব তার ফেসবুক পেজে লাইভ প্রচার করে।

এখবর পেয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহিন হোসেন শাহিনের নেতৃত্বে পৌর পরিষদ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের দেখে মুহুর্তেই মোতালেব দ্রুত ইউএনও’র গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়।

এসময় কাউন্সিলররা সবজি মার্কেটের বিষয়ে মোতালেব হকের দেয়া মিথ্যে তথ্য খন্ডন করলে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে দ্রুত চলে যায়। পরে কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ীরা হকের বিরুদ্ধে মিছিল ও সমাবেশ করে।

এতে বক্তব্য রাখেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়র শাহিন হোসেন, ১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা স্বেচ্ছা সেবকদলের সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পু, ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোবায়দুর রহমান শাহীন,আধুনিক পৌর সবজি বাজার সমিতির জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ, মাংস ব্যবসায়ী সভাপতি নাদিম কোরাইশী, মুরগী ব্যবসায়ী সভাপতি কাজী মতিয়ার।

বক্তারা জানান, মোতালেব হক রেলওয়ের কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিয়েছে যে, পৌর সবজি মার্কেট সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রধান পানি নিষ্কাশন নালার (ব্যাকবোন ড্রেন) উপর নির্মান করা হয়েছে।,এতে কারখানা হুমকির মুখে পড়েছে। সে তার চিরাচরিত অভ্যাসবশত মিথ্যেচার করেছে।

অথচ কারখানার ব্যাকবোন ড্রেন মার্কেট থেকে প্রায় ৫শ’ গজ পশ্চিমে মাড়োয়ারি পট্টি এলাকায়। মার্কেটের নিচে যে ড্রেন আছে সেটা পৌরসভার তৈরী। আর জায়গাটা রেলওয়ের হলেও ভুমি মন্ত্রনালয় কর্তৃক লীজপ্রাপ্ত ২৫ একর জমির মধ্যেই। তাই এখানে চলমান নির্মান কাজ কোনভাবেই অবৈধ নয়। এটি পৌরসভারই সম্পত্তি।

এমতাবস্থায় মিথ্যে, মনগড়া ও ষড়যন্ত্রমুলক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, ভিত্তিহীন বস্তাপচা সংবাদ প্রকাশ ও বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে সৈয়দপুর উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী এবং চাঁদাবাজ নামধারী সাংবাদিক ও আওয়ামীলীগ নেতা মোতালেব হোসেন হককে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে