জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ ভালোবেসে বিয়ে করার ৬ মাসেই যৌতুকের বলি হওয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না নাদিয়া প্রিয়াঙ্কাকে (১৪) হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১ টায় প্রেসক্লাবের সামনে প্রিয়াংকার আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক ও সহপাঠীরা এর আয়োজন করে।

এতে বক্তব্য রাখেন, প্রিয়াঙ্কার বাবা পাপ্পু হোসেন, মা রুপা বেগম, মামা সম্রাট, ওব্যাট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তাবাসসুম আক্তার, সহপাঠী মোছা. নাদিয়া, মোছা. তানিয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রুহুল আলম মাস্টার, বিশিষ্টজন ওবায়দুর রহমান ও এলাকাবাসী রাজু প্রমুখ। তাদের অভিযোগ মামলা তুলে নিতে প্রিয়াঙ্কার শ্বশুর জুয়ার আসর পরিচালনাকারী বাদশা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি এলাকার লোকজন যৌথ স্বাক্ষরে একটি অভিযোগ করায় তাদেরকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ প্রথমে নিতে গড়িমসি করে। পরে এমপির সুপারিশে নিলেও কোন রিসিভ কপি দেয়নি। তাছাড়া খারাপ আচরণ করার কথাও উল্লেখ করেন। তাছাড়া মামলার ৫ জন আসামীর মধ্যে মাত্র ২ জনকে গ্রেফতার করলেও বাকী ৩ জনকে ধরছেনা। তারা মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নয়তো সবাইকে লাশ বানাবে বলে দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে বাদশা চরম বেপরোয়া আচরণ করছে।

এব্যাপারে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) রাসেল পারভেজ বলেন, মামলার পরেই প্রিয়াঙ্কার স্বামী বিজয় ও ভাসুর রকি হোসেন বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। আর জিডি করলে তা তদন্ত সাপেক্ষে নথিভুক্ত হবে। এজন্য তদন্তের আগে রিসিভ কপি দেয়া হয়না।
জানা যায়, শহরের মিস্ত্রিপাড়া মহল্লার বাদশা মিয়ার ছেলে বিজয় (১৬) ও মুন্সিপাড়া এলাকার দিনমজুর পাপ্পু হোসেনের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। বিজয় সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র আর প্রিয়াঙ্কা পড়তো এনজিও পরিচালিত ওব্যাট স্কুলের ৯ম শ্রেণিতে। দুজন দুজনকে ভালোবেসে গত ৬ মাস আগে পরিবারকে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে।

বিয়ে মেনে নিলেও পরে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। প্রিয়াঙ্কার উপর নেমে আসে নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে নির্যাতন করে নিজ শোয়ার ঘরে সিলিংয়ে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। পরে প্রিয়াঙ্কাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে মারা যায় প্রিয়াঙ্কা। বাদশার পরিবারের দাবী মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।

তবে প্রিয়াঙ্কার মামা মো. তুফান এটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করেন। তিনি বলেন, প্রিয়াঙ্কাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে বিজয় ও তার পরিবারের লোকজন। পুলিশও প্রিয়াঙ্কার শ্বশুর বাদশার সাথে যোগসাজশে আত্মহত্যা বলেই অভিযোগ করেন। কিন্তু পরে আমি হত্যা মামলা দায়ের করলে বাধ্য হয়ে আসামী ধরে পুলিশ। তাছাড়া এলাকার লোকজন জানান, যখন প্রিয়াঙ্কাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয় তখন তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহৃ ছিল। সে মারা যাওয়ার পর তার শশুর বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে