post

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ ভাঙ্গাচোরা দেয়াল, তার ওপর একাধিক ফাটল। দেয়ালের রং উঠে গেছে কয়েক বছর আগেই। একটি মাত্র কাঠের দরজা, তাও ভাঙ্গা। বাইরে থেকে ভাঙ্গা দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলে ভেতরের টেবিল আর চেয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই তা স্পষ্টই দেখা যায়। আর চারপাশে স্যাঁতসেঁতে কাদা। এটি জেলার বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের একটি ডাকঘরে দৃশ্য। যদিও প্রতিদিন নিয়ম করেই পোস্ট মাস্টার দিনে দুই বার এমন ডাকঘরের কর্মকা- সম্পাদন করেন। তাতে বিন্দুমাত্র ক্ষোভও নেই তার।

স্বাধীনতা পরবর্তী সেই সময়েয় সেই ডাক বিভাগের প্রতি এখন তেমন আগ্রহ নেই এই প্রজন্মের আধুনিক মানুষের। যতটুকু আছে শুধুই দাফতরিক। শহরের কয়েকটি এলাকা ছাড়া অধিকাংশ জায়গায় গেলেই দেখা যায় চিঠি রাখার বাক্সের চারপাশে আগাছার রাজত্ব। দেখলেই বোঝা যায় এটি এখন নিষ্প্র্রয়োজন। অথচ কত মানুষের খবরাখবর বহন করত এই ডাক বিভাগ। এখন সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে অনেক কিছুই। পাল্টে যাচ্ছে মানুষের আচরণ ও পরিবেশ। ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। যার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্রই। দক্ষ জনবল আর যথাযথ প্রচারের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে ডাক বিভাগ। এ কারণেই ডিজিটাল ডাক বিভাগের বিভিন্ন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছান সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, বর্তমান প্রযুক্তির এ যুগে প্রয়াত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার রানারের দেখা মেলে না। ‘খবরের বোঝা হাতে/রানার চলেছে রানার’। কিন্তু না কোথাও দেখা মেলে না ‘সেই রানারের’। সময় ও প্রযুক্তির সঙ্গে অনেক কিছুই পাল্টালেও পুরনো আবহ ধরে রেখেছে ডাকঘর। আর সেকারণেই ই-মেইল-ইন্টারনেটের যুগে রানারের সেই ব্যস্ততা আর বর্তমানে নেই। ডাকঘরের চিঠি এখন কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ। বিভিন্ন কারণে মুখথুবড়ে পড়া ডাক বিভাগকে গুনতে হচ্ছে লোকসানও।

অথচ কমে গেছে ডাকটিকেট বিক্রি। ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস) সেবায় এখন গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা লেনদেন হয়- যা পূর্বে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতো। তবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সঞ্চয়ী ব্যাংকিং সেবা। গত সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সৈয়দপুর ডাকঘরে ৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ওই মাসে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে ২০ লাখ ৯৯ হাজার, তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয় ব্যাংকে ৫৫ লাখ ২২ হাজার টাকা, সাধারণ সঞ্চয়ে (তিন মাস মেয়াদী) ২ কোটি, পরিবার সঞ্চয় পত্রে (তিন মাস মেয়াদী) ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার, পেনসনার সঞ্চয় পত্রে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ডাক জীবন বীমায় ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া এ ডাকঘরে বৈদেশিক পার্সেল আসে প্রতি মাসে ৮-১০টি। যা অন্যান্য জেলা শহরের ডাকঘরের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। ফলে লোয়ার সিলেকশন গ্রেডের এ ডাকঘরটি প্রথম গ্রেডের ডাকঘরে উন্নীত হওয়ার দাবি রাখে।

সময়ের স্রোতে মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। মানুষ আধুনিক হতে আরও অত্যাধুনিক জগতে যাচ্ছে। আর বর্তমান যুগে পুরনো সেই চিঠি লেখার অভ্যাস একেবারেই নেই। চিঠি লেখার সেই জায়গাটি এখন দখল করেছে মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা, ই-মেল, টুইটার বা ফেসবুকের চ্যাটিং। প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন ইমু, ভাইভার, হোয়াটসএ্যাপ বা স্কাইপির মতো প্রযুক্তি। ঝামেলাহীন ও দ্রুততার সঙ্গে সংযোগ পাচ্ছে প্রিয় মানুষের।

বর্তমান যুগের প্রেমিক-প্রেমিকারাও বসে থাকে না চিঠির আশায়। হারিয়ে গেছে চিঠি! হারিয়ে গেছে প্রিয়জনকে কাগজে লেখার সেই যুগ। আর তার সঙ্গে হারিয়ে গেছে ডাকঘরও! কেননা ব্যস্ততা কমেছে ডাক বিভাগের। সাইকেলের বেল বাজিয়ে ডাক পিয়নের ‘চিঠি এসেছে…চিঠি…’ এমন কথাও আর শোনা যায় না। এখন আর সেই আগেকার দিনের মতো পিয়নের পানে চেয়ে থাকতে হয় না প্রিয়জনদের। আধুনিক যুগে চিঠিশূন্য এখন ডাকঘর। প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় এখন আর চিঠির প্রচলন নেই বললেই চলে। তবে চিঠির যে প্রয়োজনটুকু এখনও টিকে আছে তা শুধুই দাফতরিক।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার মো. শামসুজ্জামান বলেন, আমরা একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। ডাক বিভাগ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে এর চেয়েও ভাল কি করে সেবা দেয়া যায় এবং জনগণ সেবা পায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা চলমান রেখেছি। কেননা এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে