জি, এম স্বপ্না, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের আটঘরিয়া ও চাঁদপুরের শীতল পাটির চাহিদা এক সময় দেশব্যাপী সমাদৃত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এটি এখন বিলুপ্তির পথে।
এক সময়ে লোকশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাটি শিল্প। পাইত্তা কেটে বেত বানিয়ে তা সিদ্ধ বা শুকিয়ে বুনানো হয় পাটি। গরমের দিনে এই পাটি ব্যবহারে স্বস্থির নি:শ্বাস বা দেহমন ঠান্ডা হয় বলেই একে শীতল পাটি বলা হয়।
শীতল পাটি প্রস্তুতকারীদের হাতে মুলধনের অভাব,সঠিক বাজারজাত করণ,প্লাস্টিক শিল্পের থাবা,উপকরনের মুল্যবৃদ্ধি সহ সরকারিপৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যার বেড়াজালে কারুশিল্পীরা এ পাটি তৈরিতে দিনদিন আগ্রহ হারাচ্ছেন।আগে ক্রেতারা বিয়ের অনু্ষ্ঠান সহ যে কোন অনুষ্ঠানে শীতল পাটি বাধ্যতামুলক কিনতো।
আধুনিকতার ছোয়ায় এখন সিরাজগঞ্জের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির নারীদের হাতে বুনানো ( মুর্তা) বা পাইত্তার শীতল পাটি আর তেমন দেখা যায় না। ৮০-৯০ দশকে এ সব শীতল পাটি সাধারন মানুষদের ঘরে ঘরে ব্যবহার হত। আধুনিকতার স্পর্শে মানুষের জীবন মানের পরিবর্তেনের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শীতল পাটি।
এ পাটির পরিবর্তে এখন প্লাস্টিক পাটি, চট-কার্পেট,মোটা পলিথিন,রকমারি ফ্লোর পেপার সহ বিভিন্ন উপকরণ স্থান দখল করে নিয়েছে। শীতল পাটির বুনন ও চাহিদা কমলেও সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার আটঘরিয়া, জয়ানপুর ও কামারখন্দ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর নারীরা শত কষ্টেও তাদের পুর্বপুরুষদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
স্থানীয় মুরুব্বীদের মতে,প্রায় ২শ’ বছর ধরে এসব এলাকায় পাইত্তার চাষ হচ্ছে। এ সব এলাকার নারী- পুরুষদের সমন্বয়ে তৈরীকৃত শীতল পাটি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ও হাটবাজারে খুচরা বিক্রি হতো। প্লাস্টিক শিল্পের চাহিদা বৃদ্ধি সহ নানাবিধ সমস্যায় শীতল পাটির ব্যবসা এখন পথে বসেছে। রায়গঞ্জের আটঘরিয়া গ্রামের আসমা,রানীকা,সোহাগী ,শীতারানী,,ঝর্না কুমারীসহ অনেকেই বলেন,এক সময় আটঘরিয়া,জয়ানপুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতে শীতল পাটি তৈরীতে ব্যস্ত থাকত নারী-পুরুষ।
হাতে গোনা কিছু পরিবার ছাড়া এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কামারখন্দের চাঁদপুর এলাকার প্রায় শতাধীক ক্ষুদ্র পরিবার এখনও এই পেশাটি ধরে আছেন। বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা দরে পাইত্তা কিনে পুরুষেরা সলাকা থেকে চিকন বেত তৈরি করেন। আর মেয়েরা বিভিন্ন রকমারী সাজে পাটি বুনাতে ব্যস্ত দেখা যায়।
পাটু প্রস্তুতকারীরা জানিন, সপ্তাহে ২ টি বড় পাটি বুনানো যায়। আকার বুঝে ১২ থেকে ১৮ শত টাকায় বিক্রি করা যায় বলেও জানান চাঁদপুরের শ্রীমতী আদুরী রানী। একই গ্রামের ৮৫ বছর বয়সী শ্যামসুন্দর জানান,পুর্ব পুরুষেরা এ পেশাই করত। তাই ছোট বেলা থেকে এ পেশা করে আসছি। তিনি আরও বলেন,অনেকেই এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়। তবে ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলো না।সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও বাপ,দাদার পেশা হিসেবে আজও ধরে রেখেছি।