lailatul kadar

মাহমুদ উদ্দীন মামুন ———————————-
লাইলাতুল কদর ( ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ) আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা ভাগ্যোন্নয়নের রজনী। এ রাতে উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ রজনীর ইবাদতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার যে কালপরিক্রমার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর মাহে রমজানে সেই মহিমান্বিত ও শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর কল্যাণ, মুক্তি ও শান্তির বার্তা নিয়ে মুসলমানদের জীবনে ফিরে আসে। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব :
———————————-
লাইলাতুল কদর মুসলমানদের
কাছে এমন মহিমান্বিত বরকতময়
এবং বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এ জন্য যে, এ
রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ মহাপবিত্র গ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ
কোরআনে ঘোষণা করেছেন ,
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ – ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺩْﺭَﺍﻙَ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ –
ﻟَﻴْﻠَﺔُ
ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ – ﺗَﻨَﺰَّﻝُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﺡُ ﻓِﻴﻬَﺎ
ﺑِﺈِﺫْﻥِ ﺭَﺑِّﻬِﻢ ﻣِّﻦ ﻛُﻞِّ ﺃَﻣْﺮٍ -ﺳَﻠَﺎﻡٌ ﻫِﻲَ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﻄْﻠَﻊِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ
“ নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ
করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত
সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত
হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে
রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয়
প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের
অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ
করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল-
কদর, আয়াত ১-৫) ”
কদরের রাত্রের যাবতীয় কাজের
ইঙ্গিত দিয়ে এ রজনীর অপার বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র
কোরআনের অন্যত্র ঘোষনা করেছেন ,
ﺣﻢ – ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦِ -ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ
ﻛُﻨَّﺎ
ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ – ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ
“ হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই
আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময়
রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি
সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা আদ-দুখান,
আয়াত: ১-৪) লাইলাতুল কদর কখন? ——————————– আল কুরআনের ভাষ্য হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোন রাতে লাইলাতুল কদর। সহীহ হাদীসে এসেছে রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
ﺗَﺤَﺮُّﻭْﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
‘রমাযানের শেষ দশদিনে তোমরা
কদরের রাত তালাশ কর’। [বুখারী : ২০২০;
মুসলিম : ১১৬৯]
আর এটি রমজানের বেজোড় রাতে
হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। নবী করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
ﺗَﺤَﺮُّﻭْﺍ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻮِﺗْﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮِ ﻣِﻦْ
ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ
‘তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের
বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত
খোঁজ কর।’ [বুখারী : ২০১৭] রমাযানের ২৭ শে রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺍﻟْﺘَﻤِﺴُﻮﻫَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮِ ﺍﻟْﺄَﻭَﺍﺧِﺮِ – ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ –
ﻓَﺈِﻥْ
ﺿَﻌُﻒَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻭْ ﻋَﺠَﺰَ، ﻓَﻠَﺎ ﻳُﻐْﻠَﺒَﻦَّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺴَّﺒْﻊِ ﺍﻟْﺒَﻮَﺍﻗِﻲ »
‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে
লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর। যদি
তোমাদের কেউ দুর্বল থাকে অথবা
অক্ষম হয় তাহলে সে যেন ২৭ তারিখ
রাতে ইবাদত করে’। [মুসলিম : ১১৬৫] অন্যত্র বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম ( সা.) নিকট এসে জিজ্ঞাসা করে হে আল্লাহর নবী, আমি খুব বৃদ্ধ ও অসুস্থ, আমার দ্বারা দাড়িয়ে থাকা খুব কঠিন অতএব আমাকে এমন এক রাতের কথা বলুন, যেন সে রাতে আল্লাহ আমাকে লাইলাতুল কদর দান করেন। তিনি বললেন, তোমার উচিত সাতাশ আকঁড়ে ধরা। ( আহমদ:১/২৪০, বায়হাকি:৪/৩১২)
তবে রাসূল ( সা.) থেকে বিভিন্ন বর্ণনা মতে ২১ রামাদান থেকে পরবর্তী প্রত্যেক বিজোড় রাতের মধ্যে যেকোন এক রাতে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর-এ আমাদের করণীয় : ———————————– লাইলাতুল কদর রাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সমস্ত রজনী আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদর দ্বারাই সৌন্দর্য ও মোহনীয় করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা এ বরকতময় রজনীতে বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদতে রত থাকো।
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে
হজরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের
বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ
করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত
অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাঁদের
জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)
অন্য হাদীস আসছে-
ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ – ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ – ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ
ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ” ﻣَﻦْ ﻗَﺎﻡَ ﻟَﻴْﻠَﺔَ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ
ﺇﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ ” ” ﺭﻭﺍﻩ
ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ( 1910 ) ﻭﻣﺴﻠﻢ ( 760 )
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত,
রাসূল ( সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি
ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব হসিলের
উদ্দেশ্যে কদরের রাতে দন্ডায়মান হয়,
তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে
দেওয়া হবে। ( বুখারী:১৯০১, মুসলিম :
৭৬০ ) বিশেষ দোয়া পড়া। রাসূল (সা.) বলেন-
ﻋَﻦ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻗﺎﻟَﺖْ : ﻗُﻠْﺖُ :” ﻳﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃﺭَﺃﻳْﺖَ ﺇﻥْ ﻋَﻠِﻤْﺖُ ﺃﻱُّ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ، ﻣَﺎ ﺃﻗُﻮﻝُ ﻓِﻴﻬﺎ؟
ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻮﻟﻲ :
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ
হযরত আয়েশা ( রা.) একদা রাসূল ( সা.)
কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে
রাসূলুল্লাহ, আমি যদি লাইলাতুল কদর
পাই তখন কী করব? তিনি বলেন, তুমি
বলবে-
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল,
আপনি ক্ষমা করে দিতে
ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা
করুন। ( তিরমীজি: ৩৫১৩)
সুতরাং এ রাতে বেশি বেশি তাসবিহ, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
লাইলাতুল কদরে বিশ্ববাসীর জন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানবতার মুক্তির সনদ পবিত্র কোরআনুল কারিম কে নাযিল করা হয়। তাই পবিত্র কোরআনের শিক্ষাই মানবতার সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালিন শান্তি ও পরকালিন মুক্তির পথ দেখায়।
আসুন কোরআন পড়ি,
কোরআন বুঝি,
কোরআন দিয়ে জীবন গড়ি।

 

লেখক -শিক্ষার্থী, কোরআনিক সাইন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ,
 আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে