ডেস্ক রিপোর্টঃ মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার’ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের বৌদ্ধ নেতারা।
তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নিপীড়ন, নির্যাতন ও মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলেছে তাতে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে তারা বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
একইসাথে তারা বাংলাদেশে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা আশঙ্কা করছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর এধরনের নির্যাতনের ফলে বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারে।
ঢাকায় কয়েকটি বৌদ্ধ সংগঠনের নেতারা আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে করে তাদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ সংগঠন ছাড়াও ধর্মীয় গুরুরাও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কেউ যাতে মিয়ানমারের ঘটনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের দোষারোপ না করে এবং তাদের নিরাপত্তাও যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্যে তারা সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নির্যাতনের ছবির কথা ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, “কিছু ভিন্ন দৃশ্যপটকে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন বলে উস্কানিমূলক একটি প্রচারণার প্রচেষ্টাও আমরা লক্ষ্য করছি।”
“ভিন্ন দেশের, ভিন্ন প্রেক্ষাপটের, ভিন্ন চিত্রগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের বৌদ্ধদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার কথাও বিচ্ছিন্নভাবে বলা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের রামুতে বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে অশোক বড়ুয়া বলেছেন, “ফেসবুকে একটি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে কিম্বা বিকৃত করে পোস্ট দিয়ে অতীতে বৌদ্ধদের ওপর হামলা চালানো হয়েছিলো। ভবিষ্যতে যাতে এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে আমরা আহবান জানিয়েছি।”
মিয়ানমারের বৌদ্ধ নেতাদের সাথে তাদের পক্ষ থেকে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কীনা এই প্রশ্নের জবাবে মি. বড়ুয়া সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে বলেছেন, “একজন প্রকৃত বৌদ্ধ কখনো সহিংসতার পথ অবলম্বন করে না।”
তিনি বলেন, “মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, হিংসার দ্ধারা কখনো হিংসা প্রশমিত হয় না। হয় মায়া মমতায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হিসেবে এই নির্যাতনকে আমরা কখনো সমর্থন করতে পারি না।”
তবে তিনি বলেছেন, বৌদ্ধদের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা তাদের এই প্রতিবাদের কথা তুলে ধরেছেন।
মিয়ানমারে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চলছে – জাতিসংঘের এই বক্তব্যে কোন ধরনের মন্তব্য করতে চান নি অশোক বড়ুয়া।
তিনি বলেন, “এবিষয়ে মন্তব্য করা থেকে আমি বিরত থাকতে চাই। কারণ এটা মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এধরনের সহিংসতাকে আমরা কখনো সমর্থন করতে পারি না।”
চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে সেসব জায়গায় বৌদ্ধদের সংখ্যাও অনেক। সেখানে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সব ধর্মের লোকজনের সাথেই বৌদ্ধরা সৌহার্দমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করছেন।”
বি/বি/সি/এন