পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার আর্থ-সামাজিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ২৫০.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমন্বিত প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে চলেছে।


বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পাঁচ বছর (২০১৯-২০২৪) মেয়াদি ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প (ইআইআরপি)’ টি বাস্তবায়ন করছে।


ইআইআরপি প্রকল্প পরিচালক এবং বিএমডিএ এর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান খান বাসস’কে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ বহুমাত্রিক সুবিধা উপভোগ করবেন।

প্রকল্পটি পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের উন্নতির পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ পানির যথায়থ সংরক্ষণ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং গাইবান্ধার জেলার ৩৫ টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।


‘ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্পটির আওতায় খাল, বিল ও পুকুর পুনঃখনন, লো লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন, সৌর বিদ্যুতচালিত খননকৃত পাতকুয়া এবং ফুটওভার ব্রিজ ও ক্রস ড্যাম নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে,’ ইঞ্জিনিয়ার খান বলেন।


জলাশয়গুলো পুনঃখননের ফলে পানিধারণ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, অতিরিক্ত পানি নিষ্কাষণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে জলাবদ্ধ জমি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী হবে। এছাড়াও, সঞ্চিত পানি সেচ, হাঁস-মুরগি ও মাছ চাষ ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যাবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরে এক কিলোমিটার দীর্ঘ খালে সংরক্ষিত পানি ব্যবহার করে ৩০ হেক্টর ফসলী জমিতে সেচ প্রদান এবং ১০০ হেক্টর ফসলী জমিতে সম্পুরক সেচ দেয়া সম্ভব হবে। ফলে, সেচকাজের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন এবং ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করবে।
‘পুনঃখননকৃত জলাশয়গুলোতে সংরক্ষিত ও সঞ্চিত পানি যথেষ্ট পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর পুনরায় রি-লোড করার মাধ্যমে পরিবেশের উন্নতি সাধন করবে, ’ ইঞ্জিনিয়ার খান জানান।

প্রকল্পটির লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ২৩০ কিলোমিটার খাল, ১১ টি বিল এবং ১১৮ টি পুকুর পুনঃখনন এবং ৩০ টি সৌরবিদ্যুৎ চালিত এলএলপি, ১০০ টি বিদ্যুতচালিত এলএলপি, ৫০ টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত পাতকুয়া স্থাপন এবং ২.৩০ লক্ষ কাঠ, ফল এবং ঔষধি গাছের চারা রোপণ করা হবে।
‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সঞ্চিত ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে ১০,২৫০ হেক্টর ফসলী জমিতে সেচপ্রদানসহ জলাবদ্ধতা থেকে ৩৫০ হেক্টর ফসলী জমি মুক্ত করে কৃষিকাজের আওতায় এনে খাদ্য-শষ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে,’ খান বলেন।


এছাড়াও, প্রকল্পটি সৌর শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ কাজে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প পানি-গ্রাহী ফসলের চাষ বৃদ্ধি এবং পরিবেশ উন্নত করতে বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবেশ ও জীববৈচিত্র উন্নয়নে সহায়তা করবে।
‘মোট ১৩০ টি এলএলপি থেকে সেচের জন্য ১৩০ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ পাইপলাইন নির্মাণের ফলে সেচকাজে পানির অপচয় রোধসহ সেচের ব্যয় হ্রাস এবং সেচের দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের জন্য কৃষিকাজ অধিক লাভজনক হবে,’ খান বলেন।


তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটির আওতায় ২০ কিলোমিটার খাল, তিনটি বিল ও ১০ টি পুকুর পুনঃখনন, ১০ টি সৌর বিদ্যুৎচালিত এলএলপি, ১০ টি বিদ্যুতচালিত এলএলপি, ১০ টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত খননকূপ পাতকুয়া ও ৩১ হাজার গাছের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারিত রয়েছে।
‘আমরা ইতিমধ্যেই প্রকল্পএলাকার চারটি উপজেলায় পাঁচটি প্রধান খালের ১৮-কিলোমিটার, একটি বড় বিল এবং ১২ টি পুকুর খনন এবং ৩৯,৮০০ টি গাছের চারা রোপন করে চলতি অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছি,’ খান বলেন।


এব্যাপরে বাসসে’র সাথে আলাপকালে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব বলেন, বিএমডিএ ইতিমধ্যেই বোয়ালেরদারা খালের দু-কিলোমিটার খনন সম্পন্ন করায় এলাকার আট শতাধিকেরও বেশি পরিবার খালের পানি থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক কেদার সেন বলেন, বোয়ালেরদারা খালটির পুনঃখনন স্থানীয় মানুষদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। তারা সেখানে সংরক্ষিত পানি পরিপূরক সেচ, হাঁস পালন, মাছ চাষ ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে লাভবার ও উপকৃত হচ্ছেন।
তবে, বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেন, কিছু অসাধু মহল দীর্ঘমেয়াদী ইজারা বা জাল নথি তৈরি করে অল্প কিছু সংখ্যক জলাশয় নিজেদের দখলে নেয়ায় কোথাও কোথাও পুনঃখনন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে হওয়ায় সাধারণ মানুষেরা প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা এখলাছুর রহমান ও নজরুল ইসলাম জানান, এলাকার কিছু মানুষ ১১.৬৩ একর আয়তন বিশিষ্ট মাঠিয়াখোলা বিলের জমি তাদের নিজের বলে দাবি করে পুনঃখননে বাধা প্রদানের চেষ্টা করছেন।
তারা স্থানীয় প্রশাসনকে এ ধরণের বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি খাস জমি জনস্বার্থে পুনরুদ্ধারপূর্বক মাঠিয়াখোলা বিল পুনঃখনন করে সেখানে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

BSSN

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে