আ,ফ,ম মহিউদ্দিন শেখ কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) থেকেঃ জোবায়ের আলম একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। বহু প্রতিভাধর এই ব্যক্তির রয়েছে বেশ কিছু পরিচয়। তিনি একাধারে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও প্রকাশক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যান এবং শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক জনাব জোবায়ের আলম ছোটবেলা থেকেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। উদ্যমী এই মানুষটি কখনই বসে থাকার লোক ছিলেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতকোত্তরের পাঠ চুকিয়ে তিনি কানাডা ও আমেরিকা থেকে দুইটি মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সামার প্রোগ্রামে অংশ নেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকাকালীন সময়েই মূলত তিনি ঢাকা শহরের সাথে অন্য দেশের শহরগুলোর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করেন। দেশে ফিরে আসার পরে ঢাকার বেহাল অবস্থা দেখে তিনি প্রায়ই বিমর্ষ হয়ে পড়তেন। তখন থেকেই তার মধ্যে চিন্তা আসতে শুরু করে কিভাবে তিনি তার অবস্থান থেকে তার প্রিয় এই শহরটির জন্য কিছু করতে পারেন। সমাধান হিসেবে তিনি ঢাকাকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মডেল শহরে রূপান্তরের স্বপ্ন বোনা শুরু করেন। তার মতে ‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে কখনোই একটি নগরের আমূল পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়’- তাই আসন্ন ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তার সাথে একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো :
আপনি কেন মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যার পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মেগাসিটি ঢাকা প্রায় বসবাসের অনুপযোগী। অসহনীয় যানজট, অব্যবস্থাপনা এবং মাত্রাতিরিক্ত মানুষের চাপে ঢাকার বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করার সময় পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের প্রশস্ত রাস্তা, বিস্তীর্ন সবুজ পার্কে ঘুরে বেড়াতাম শুধুমাত্র সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য নয় বরং নগর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণরীতি সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। প্রায় ৩ বছর আমেরিকার সবচেয়ে বড় মেগাসিটি নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালেও লক্ষ্য করেছি নগর কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থাপনা কীভাবে নাগরিক জীবনযাত্রার মানকে সরাসরি প্রভাবিত করে।আমি মনে করি শুধু এক বা দুই সুপ্তাহ এর জন্য কোন শহরে বেড়াতে গেলে সেই শহরের ব্যাবস্থাপণা সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া সম্ভব না । উচ্চশিক্ষার জন্য যেহেতু ভ্যানকুভার ও ম্যানহাটন সিটিতে দীর্ঘদিন আমাকে থাকতে হয়েছে সেহেতু স্বভাবতভাবে এই শহরগুলোর সু-ব্যবস্থাপণা সম্পর্কে আমার সম্যক ধারণা রয়েছে। এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো ঢাকা শহরের উন্নয়নে কিছুটা হলেও ভুমিকা রাখবে ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমাদের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সাহেব ঢাকার এই অবস্থার উন্নয়নে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকাকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের জন্য মাঠেময়দানে কাজ করে গেছেন। তার উত্তরসূরি হিসেবে সমাজের সর্বস্তরের অংশীদারদের সাথে নিয়ে আমিও পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদপুষ্ট হলে মেয়র হিসেবে ঢাকাকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই আমরা আজকের বাংলাদেশ পেয়েছি এবং যুগে যুগে আমার মতো বাঙালি তরুণদের অনুপ্রাণিত করে গেছেন আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার জন্য। পারিবারিক ভাবেই আমরা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সমর্থক। আমার বাবা ছিলেন থানা আওয়ামীলীগের সক্রিয় সদস্য। সেই মূল্যবোধ থেকেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হই। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীলীগ সমর্থিত শিক্ষক সংগঠন নীলদলের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষ জনবল তৈরির প্রয়াস থেকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাবিতে শিক্ষক হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
আমার অবসরের সময় নেই বললেই চলে। প্রতিদিন আমি জাতীয় গুরুত্বের দুইটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করি। যেমন আমি খুব সকালেই বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই ক্লাস নেওয়ার উদ্দেশ্যে। গবেষণাকর্ম, সিলেবাস প্রণয়ন ও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাউন্সেলিং শেষে আমি বিকেল থেকে স্বনামধন্য ইংরেজি পত্রিকা দি বাংলাদেশ টুডে’র সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। দেশের যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংকটাপন্ন মুহূর্তে দি বাংলাদেশ টুডের পক্ষ থেকে আমরা সবসময় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় আমরা পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা প্রায় ১০০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করেছি।
রোহিঙ্গাদের সমস্যাকে বিবেচনায় নিয়ে আমরা সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে মানবিক সাহায্যের ক্যাম্পেইন চালিয়েছি যেনো এটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি অগ্রগণ্য বিষয়ে পরিণত হয়। মেধাবী ও কৌতূহলী শিশুকিশোরদের বিজ্ঞান চর্চায় আগ্রহী করে তোলার লক্ষে আমরা জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের এবং উদ্যোগী তরুণদের ভাগ্য উন্নয়নে সর্বদা কাজ করতে বদ্ধপরিকর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে