কাওছার হামিদ,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)॥ নাম জাহাঙ্গীর আলম বাড়ি নীলফামারীর কিশোরঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পার হয়ে মাধ্যমিকের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। বাবা ২য় বিয়ে করে অন্যত্রে পাড়ি জামান। পরে অনেক কষ্টে একটি অটোবাইক ক্রয় করে চালা শুরু করেন। দীর্ঘ এক বছর অটোবাইক চলাকালিন সময় অটোবাইকে বিভিন্ন সময় মানুষ গল্পের ছলে অনেক কথা বলেন অপর যাত্রীদের সঙ্গে,। ভাই আমার বাড়িতে কারেন নাই ছেলে-মেয়েদের লেখা পাড়া করতে অনেক কষ্ট হয়। এলাকার অনেক কারেন্টের লোক আছে তারা আমাদের কাছ থেকে কয়েকবার কারেন্ট দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছিল কিন্তু কারেন দিতে পারেন নাই। ঘুরতে ঘুরতে অনেক হয়রানি হয়েছি এমনকি টাকা খেয়ে ফেলেছে। অটোবাইক চালক জাহাঙ্গীর আলম এসব মানুষের কষ্ঠের কথা শুনে ইচ্ছে জাগে কি ভাবে মানুষের ঘরে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া যায়। হঠাৎ করে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ঝেল্লা পাড়া গ্রামের ইলেকটিশিয়ান আনছার আলী নামে এক ভাইয়ের খোঁজ পান। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সামতির একজন ইলেকটিশিয়ান তখন তার সাথে পরিচয় হলাম আমি। পরে আনছার আলী ভাইয়ের সাথে নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি যাতায়াত শুরু করি আর বিষয় গুলো নিয়ে চিন্তা করি কিভাবে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যায়। আনছার আলী ভাই আমাকে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস নিয়ে যায় কিন্ত নিচে রেখে উনি উপরে উঠে কাজ সেরে নিচে নেমে আসেন। আমি একদিন ভাইকে বলি ভাই আমার কি হবে? তার পর থেকে উনি বিভিন্ন কর্মকর্তার নিকট নিয়ে যান আমাকে । এক সময় কর্মকর্তারা আনছার আলী ভাইকে জিজ্ঞেস করেন উনি কে তথন পরিচয় দেন আমার ভাগনে হয়, বাড়ি কোথায় মাগুড়ায়। তখন ওই কর্মকর্তারা আমার আচার ব্যবহারে সন্তষ্টু হয়ে আমাকে একদিন বললেন আপনি আপনার এলাকার যেসব বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই সেইসব বাড়ির মালিকদের ভোটার আইডি কার্ড ,ছবি এবং মিটার জামানত বাবদ ৬০০/-(ছয়শত) টাকা করে নিয়ে আসবেন আমি আপনার এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিব। এটাই হলো আমার স্বপ্ন পূরনের একটি সুযোগ প্রথম অবস্থায় মানুষের কাছে বিশ্বাস অর্জন করা একটি কঠিন কাজ। তাই প্রথমে এক ব্যক্তি বিদ্যুৎ সমস্যায় ভুগছিলেন এমনকি বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় একজন দালাল টাকাও নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। পরে সেই ব্যক্তিকে বললাম আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস করেন তাহলে আমাকে মিটারের জামানত বাবদ ছয়শত টাকা দিলে আমি আপনাকে কথা দিলাম ৭ দিনের মাথায় বিদ্যুতের বাল্প চালিয়ে দিব। পরে ওয়াবিং পরিদর্শন ইন্সপেক্টর আব্দুল হাদী স্যারের বিশ্বাস টুকুর উপর ভরশা করে কাজ শুরু করলাম। মাগুড়া ইউনিয়নের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে যাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই এবং বিদুৎতের খুটি নেই তাদের বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। এভাবে একের পর এক মানুষের বাড়িতে বৈদ্যুতিক খুটি এবং মিটারের ব্যবস্থা করি বিদ্যুৎ জ্বালিয়ে দেই। তখন এলাকায় এমন পরিচিতি লাভ করলাম কারো বিদ্যুতের মিটারের প্রয়োজন হলে একটি নাম সেটি জাহাঙ্গীর ভাই এভাবে করে এখন পর্যন্ত প্রায় আবাসিক ও বানিজ্যিক মিটার সহ প্রায় দশ হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ, মিটার সংযোগ দিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখিয়েছি তাদের। অনেক গ্রামে এখন একটাই নাম বিদ্যুৎ জাহাঙ্গীর বা মিটার জাহাঙ্গীর নামে তিনি পরিচিত। মাগুড়া বাজার সংলগ্ন বৈশ্যপাড়ায় একাধিক গ্রাহকের সাথে সরেজমিনে গিয়ে কথা বললে তেনারা বলেন আগোত মেলা মানুষ হামাক বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা কয়া টাকা খেয়া ফেলাইছে, জাহাঙ্গীর ভাই হামাক এক সপ্তাহের মাথাত বাতি জ¦লে দিছে এখন আর হামার চিন্তা নাই হামার ছোয়া-পোহার ঘর কারেনটোত লেখা পড়া করেন। এসব কথা গুলো বলছিল ওই গ্রামের সাইকেল মেকানিক শ্রী জনক চন্দ্র, শেম্বু চন্দ্র, শ্রী পোল্লাদ চন্দ্রসহ অনেকে। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই মানুষ মানুষের জন্য, সমাজে একটি ভাল কাজ করা ছোয়াবের কাজ। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্লোগানটিকে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্লোগান হচ্ছে, শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। তাই মাগুড়া ইউনিয়নে এখন শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদুল হোসেন শিহাব মিঞা আমাকে যচেষ্ট সহযোগিতা করেছেন বলে জানান,সংযোগ দিতে গিয়ে যেখানে সমস্যায় পড়েছিলাম সেখানে তার সহযোগিতা নিয়েছি। এখন আর কোন মানুষের ঘর অন্ধকার নেই বিদ্যুতের জন্য আর কোন দালাল ধরতে হয়না। ৩ সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও আলো জ্বালিয়ে দেই, খুশি হয়ে মানুষ যা দু এক শত টাকা দেয় তা দিয়ে চলে আমার ৩ সন্তানের পড়ালেখার খরচসহ আমাদের সংসার। তাই বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নীলফামারী কর্তৃপক্ষ আমাকে এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আর বাকি সময় টুকু পরিবার পরিজন নিয়ে একমুটো খেয়েপড়ে বেঁচে থেকে এভাবে কাজ করে যেতে চাই। ইনশাল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে