Muktomot-2-300x141

 

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

তোমার বাড়ি যাবার বেলা কি আর  নিব আমি  ভেজাল ছাড়া নেই তো কিছু হোক না যত দামি একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা আলোচনা করছি,কিছুদিন আগে আমি আর আমার রুমমেট। দু’জনে দোকান থেকে  ১হালি ডিম কিনেছি  তারপরের দিন সকালবেলা ক্যাম্পাসে যাবো তাই খুব দ্রুত ডিম ভেজে নিলাম ,কারন এতে সময় ও যেমন বাচে তেমনি এটা খুবই সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য।ডিম ব্যাচেলরদের একরকম প্রধান খাদ্য অনুষঙ্গ বলা যায়।আমার ডিম খাওয়া প্রায় শেষের দিকে হঠাৎ আমার রুমেমট বলছে মুজাহিদ ডিম তো নকল,আমি বললাম কি বলেন ভাই?বলেছে হ্যা,তাই বলে রুমমেট তার ভাজা ডিম আমাকে দেখালো,ডিমে কোনো্ স্বাদ নেই,কুসুম গুড়াগুড়া হয়ে যাচ্ছে।তারপর আমরা ডিমের খোসা দেখলাম ,ডিমের খোসাতে যে সাদা পর্দা থাকে তা এতে নেই ।ঐ ডিমগুলা থেকে একটা ডিম দিয়ে ভিডিও করে তা ইউটিবে ছেড়ে দিয়েছি।সেখানে নকল ডিমের যে বৈশিষ্ট থাকে আগে থেকেই তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের জন্য তা জানতাম,তাই সেগুলো  দেখাতে আমাদের সুবিধা হয়েছে। আমি তো  কখনো ভাবতেই পারিনি ডিম ও নকল হয়ে যাবে।সব সময় বলতাম সব কিছু নকল হলে ও ডিম নকল হতে পারেবনা,একথা মিথ্য প্রতিপন্ন হলো। আমাদের এই অভিজ্ঞতা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমার ধারণা সবাই কম বেশি এই ধরণের পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন হয়েছেন বা হচ্ছেন। আসলে আমরা প্রতিদিন কি খাচ্ছি? কি খাইয়ে বড় করছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে? এমন কোন খাদ্য বস্তু কি খুঁজে পাওয়া যাবে যাতে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না? অখ্যাত ফল বিক্রেতা থেকে শুরু করে বিখ্যাত খাদ্য বস্তু প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সবাই অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাদ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। আমরাও জেনে হোক আর না জেনে হোক সেই বিষাক্ত খাদ্য গুলো খেয়ে ফেলছি, আমাদের ভবিষত প্রজন্মকে খাওয়াচ্ছি।

 

খৃষ্ঠপূর্ব ৩৯৯ সালে গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসকে হ্যামলক বিষ দিয়ে মারা হয়েছিল- এ কাহিনী আমাদের সবার জানা। শোনা যায় নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জসহ আরো অনেক নামকরা ব্যক্তি আর্সেনিকের বিষে ঘায়েল হয়েছেন। যিশুখৃষ্ঠের মৃত্যুর প্রায় অর্ধশতাব্দি পর রোমান সম্রাট ক্লাউডিয়াসকে তার স্ত্রী একোনাইট বিষসহ মাশরুম খাদ্যের মাধ্যমে হত্যা করেছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে বহু যুগ। বিষের ধরনেও এসেছে বিভিন্নতা। বটুলিনাম, সায়ানাইড, মারকারি, পোলোনিয়াম, টেট্রোডোটক্সিন, ডাইমিথাইল-মারকারি, বেলাডোনা, অ্যানথ্রাক্স, বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতি যুগেযুগে ব্যবহৃত হয়েছে বা হচ্ছে মানুষ মারার কাজে। সম্রাট ক্নাউডিয়াসকে মারার ঘটনা থেকে খাদ্যে বিষ (ভেজাল) মেশানোর আইডিয়া মানুষ (বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষ) পেয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সার্বিক ক্ষতির বিবেচনায় উল্লেখিত বিষের চেয়ে খাদ্যপন্যে ভেজাল আরো অনেক বেশী মারাত্বক। কেননা খাদ্যে ভেজালের মাধ্যমে কোন একজন ব্যক্তি নয় বরং গোটা জাতি তিলে তিলে শেষ হয়ে যায়। চার, পাঁচ বা ছয়স্তর বিশিষ্ট কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনি বা গ্রীন জোনের মধ্যে থেকেও ভেজালের কবল থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে খাদ্যপন্য উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ ব্যাক্তি সবাই ভেজাল পন্য দ্বারা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌসুমি ফল, শাক-শবজি, খাদ্যশস্য, শিশুখাদ্য, পানীয়, মুড়ি, বেকারি পন্য, জিলাপি, ফার্স্ট ফুড, পশুখাদ্য, ঔষধ- কোথায় নেই ভেজাল।

 

কোন কোন খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে ?এর থেকে এখন প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে   কোন কোন খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছেনা ?জমিতে চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত পরতে পরতে মারাত্বক সব বিষ মেশানো হয় কলাতে।শাক সবজির বেলায় ও একই কথা,সবজিতে ফরমালিনসহ মেশানো হয় বিষাক্ত বিষ। অপরিপক্ক টমেটো হরমোন দিয়ে পাকানো হচ্ছে।বেকারি পন্যে দুনিয়ার ভেজাল। ফলে, মাছে ফরমালিন।। গরুকে নিষিদ্ধ ঔষধ খাইয়ে মোটা করা হচ্ছে। সেগুলো মানব স্বাস্থের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর! পচনরোধে বিষাক্ত ফরমালিন, তাজা দেখাতে মাছে রেড অক্সাইড, ফলমূল ও শাকসব্জিতে কার্বাইড মিশানো হয়ে থাকে।ভেজাল খাবারে দেশ সয়লাব। কী খাব? নিরাপদ কোনো খাবার আদৌ কী আছে? মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফলমূলে কার্বাইডসহ নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল, সবজিতে রাসায়নিক কীটনাশক, জিলাপি-চানাচুরে মবিল, বিস্কুট, আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংক্স, জুস, সেমাই, আচার, নুডুলস এবং মিষ্টিতে টেক্সটাইল ও লেদার রং, মুড়িতে ইউরিয়া-হাইড্রোজ, পানিতে আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ইকোলাই। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানব দেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। মানুষের লিভার, কিডনি নষ্ট করে ফেলে। মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ভেজাল খাবার খেয়ে আমরা জাতিকে ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি, নতুন প্রজন্মকে মেধাহীন পঙ্গু জীবনের মতো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন  দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাবে,যদি এর প্রতিকার এখনই করা না যায়।কারন এ সমস্যা দিনকে দিনকে বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর হাসপাতাল গুলোতে মানুষেরা ধরনা দিচ্ছে।ভেজাল খাদ্যের কারনে কত শত মানুষ যে নিরবে হারিয়ে যাচ্ছে ।আর স্বজনদের কান্নায় ভারী হচ্ছে আকাশ বাতাস তার হিসাব নেই।

 

সম্প্রতি এক পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন সন্মানিত  শিক্ষক আক্ষেপ করে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলেন-কি খাব সব কিছুতেই ভেজাল।ঢাকা শহরে কত সুন্দর সুন্দর ফল দেখি কিন্তু কিনতে ভয় লাগে।তাই এ বছর এখনো লিচু খাইনি।এভাবে আরো কত শত মানুষকে প্রাণভরে খেতে দিচ্ছেনা,কিছু মানুষরুপি জানোয়ার।কত টাকা লাভ করে এভাবে বিষ মিশিয়ে! আর কত প্রাণ নিলে এদের লিলা খেলা থামবে?আর কত ভেজাল খাবো।এখনই সময় এগুলোর প্রতিরোধ এ প্রতিকার করার।১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া ও ভেজাল খাদ্য বিক্রি করার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৪ বছর কারাদন্ডের বিধান থাকলেও এ পর্যন্ত তা প্রয়োগের তেমন  কোনো নজির নেই। খাদ্যে ভেজাল রোধে অনেক আইন রয়েছে, সময় এসেছে এসব আইনের কঠোর প্রয়োগ করার।সাথে সাথে সবার নৈতিক মুল্যবোধ আর জনসচেতনাই পারে খাদ্য ভেজাল প্রতিরোধ করতে।

 

লেখক-শিক্ষার্থী ,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে